গরমে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথার তীব্রতা কিছুটা কম থাকলেও শীতকালে অসহনীয় হয়ে ওঠে। এ সময় বয়স্ক লোকজন এবং যারা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো জটিল রোগে ভুগছে তাদের কষ্ট বেড়ে যায় বহুগুণ। মূলত শীত এলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে মাংসপেশিতে টান ধরে। তাছাড়া এ সময় অনেকেই পানি কম পান করে। ফলে শরীরে পর্যাপ্ত তরলের ঘাটতি দেখা দেয়। মাংসপেশির আড়ষ্টতা বাড়ার ক্ষেত্রে এটিও বড় একটা কারণ। এছাড়া শীতকালে স্নায়ুর সহ্যক্ষমতা কম থাকে এবং স্বাভাবিক নড়াচড়া কম হয়। ফলে হাড়ের জোড়া জমে যায় এবং ব্যথার অনুভূতি অন্যান্য সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বেড়ে যায়।

অস্টিওআর্থ্রাইটিসের রোগীদের করণীয়  

শীতকালে বাজারে পাওয়া যায় প্রচুর বাহারি শাকসবজি ও ফলমূল। নিয়মিত সেসব মৌসুমি ফল ও সবজি খান। যদিও এমন কোনো নির্দিষ্ট খাবার নেই যেটি খেলে ব্যথা কমে যাবে। তবে কিছু কিছু খাবার খেলে এবং কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকলে আর্থ্রাইটিসে ভোগান্তি কম হতে পারে।

সপ্তাহে অন্তত দুদিন বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ রাখুন খাদ্যতালিকায়। এতে আছে প্রদাহনাশক ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। খেতে পারেন বিভিন্ন ধরনের বাদাম। বাদামে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, ভিটামিন-ই ও ফাইবার। অস্টিওআর্থ্রাইটিসের জন্য বাদাম বেশ উপকারী।

হাড়কে শক্তিশালী করতে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে নিয়মিত দুধ, দই, পনির, ঘি, মাখন এসব দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খান। অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে সন্ধির ফোলা ভাব কমাতে খুব ভালো কাজ করে শিম, মটরশুঁটি ও অন্যান্য আস্ত শস্যদানা বা বীজ।

অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে হাড়কে রক্ষা করতে গ্রিন টি পান করতে পারেন। পলিফেনল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এই পানীয় ব্যথা ও তরুণাস্থির ক্ষতির মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যা এড়িয়ে চলবেন 

অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যা থাকলে গরু ও খাসির মাংস এবং ফসফরাসসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।

এড়িয়ে চলতে হবে চিনি ও টমেটো। টমেটোতে থাকা ইউরিক অ্যাসিড হাড়ের জয়েন্টে জমে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা বাড়িয়ে তোলে।

অতিরিক্ত চা, কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে কমিয়ে ফেলুন। এতে থাকা ক্যাফেইন শরীরকে পানিশূন্য করে তোলে, যা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথা বাড়ায়।

ধূমপান ও মদ্যপান শরীরের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর। তাছাড়া অ্যালকোহল হাড়কে ভঙ্গুর করে তোলে। তাই হাড় সুস্থ রাখতে ও অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যা কমাতে ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।

 

অধ্যাপক ডা. মো. আবু শাহীন

মেডিসিন ও রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ

ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিকস)

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.