দেশজুড়ে চলছে হিট অ্যালার্ট। পরিবেশের এই তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে শিশুর শরীরে। শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা (অন্তর্নিহিত তাপমাত্রা বা কোর টেম্পারেচার) এ সময় বাড়ে। শরীরের থার্মো রেগুলেশন বা নিজস্ব তাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে এ ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে হঠাৎ বাইরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে শরীরে তাপমাত্রা অতিরিক্ত বাড়লে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে।

অনিয়ন্ত্রিত অন্তর্নিহিত তাপমাত্রার কারণে আক্রান্ত শিশুর শরীরে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি সমস্যা হয়। প্রথম সমস্যা ‘হিট ক্র্যাম্প’। এতে শরীর থেকে বেশি মাত্রায় ঘাম বেরিয়ে যায়, সঙ্গে লবণও। এজন্য পেশিতে ব্যথা হয় বা টান-টান হয়ে যায়। পরের ধাপে শিশুর যে সমস্যা দেখা দিতে পারে, তার নাম ‘হিট এক্সোসশন’। এ পর্যায়ে ব্যথার সঙ্গে যুক্ত হবে ক্লান্তি ও অবসাদ। শিশু এ অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। পরের স্তর ‘হিটস্ট্রোক’। এটা বেশ খারাপ পরিস্থিতি। অন্তর্নিহিত তাপমাত্রা যখন আরও বাড়ে, তখন এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে লিভার, কিডনি ও ফুসফুসে। এসব অঙ্গের কার্যকারিতা কমতে শুরু করে। কেউ কেউ অচেতনও হয়ে যেতে পারে।

করণীয়

#             প্রথমেই শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। খাওয়ার স্যালাইন খাইয়ে বা পানি বেশি আছে, এমন ফল দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শিশুকে রোদ থেকে বা গরম জায়গা থেকে দ্রুত ছায়ায় বা শীতল স্থানে নিয়ে যেতে হবে।

#             ফ্যানের নিচে আনতে হবে। শরীরের আঁটসাঁট কাপড় ঢিলা করে দিতে হবে।

#             ঘাম শুকানোর পর পানি দিয়ে গা মুছতে হবে। এতে শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে পারে।

#             চিনিজাতীয় ও বেশি প্রোটিনজাতীয় খাবার না দেয়াই ভালো। জাঙ্কফুডও দেয়া যাবে না। শসা বা পানিজাতীয় যেসব খাবার এনার্জি তৈরি করবে, সেসব দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।

#             ছয় মাসের নিচের বয়সী শিশুদের ঘনঘন মায়ের দুধ দিতে হবে, অন্য কিছু নয়। তাই দুধ বাড়াতে মা একটু বেশি পানি, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা ও শাকসবজি খাবেন।

#             শিশুর প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে।

সতর্কতা

#             এই গরমে শিশুদের বাইরে খেলাধুলা না করতে দেয়াই ভালো। বিশেষ করে সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

#             ঘরে খেলাধুলার সময় একটু করে পানি বা খাওয়ার স্যালাইন দেয়া যায়। এনার্জি ড্রিংক ও সুগার ওয়াটার দেওয়া যাবে না।

#             রাস্তাঘাটের শরবত, আখের রস ও খাবার শিশু যেন পান না করে বা না খায়। এসব পানীয় ও খাবারে ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও জন্ডিসের আশঙ্কা আছে। কোনোক্রমে আইসক্রিম দেয়া যাবে না। বাসায় ফোটানো বিশুদ্ধ পানিই সবচেয়ে ভালো।

 

অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.