ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। কেউ ভয় নিয়ে জানি যে ক্যান্সার হলেই বুঝি মারা যাব। কেউ ভাবে ক্যান্সার হলেই অনেক টাকা খরচ। কেউ ভাবি, ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে ব্রেস্ট ফেলে দিলেই বোধ হয় বেশিদিন বাঁচা যাবে। স্ক্রিনিং হলো কোনো রকম সমস্যা বা লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা যেন একেবারে শুরুতেই রোগটি শনাক্ত করতে পারি এবং চিকিৎসা শুরু করতে পারি। উন্নত দেশগুলোতে সাধারণত সরকারি ব্যবস্থাপনায় জনগণের নিয়মিত চেকআপ করানো হয়।

কারা করাবেন: ৩৫ বছর বয়সের পর প্রতি দুই বছর অন্তর মেমোগ্রাম করে স্ক্রিনিং করাবেন। যাদের পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস আছে তারা এ ব্যাপারে অধিক সচেতন থাকবেন।

লক্ষণ প্রকাশ পেতে পেতে অনেক সময় রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করে ফেলে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর চিকিৎসা করালে রোগীর আদতে খুব একটা লাভ হয় না। যদি নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে খুব প্রাথমিক অবস্থায়ই রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা যায় তাহলে তার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

ক্যান্সার হলে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি প্রভৃতির সমন্বয়ে একটি সমন্বিত চিকিৎসার দরকার হয়। চিকিৎসাপদ্ধতিগুলো কোন রোগীর জন্য কতটুকু প্রয়োগ করতে হবে তা সিদ্ধান্ত নেন সার্জন, মেডিকেল অনকোলজিস্ট, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্টরা। এ সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেয়াকে বলে মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম ম্যানেজমেন্ট।

নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের সুবিধা

ভাবুন, যখন ক্যান্সারটি শনাক্ত হচ্ছে তখন এটি ৩-৫ সেন্টিমিটার হয়ে যায় এবং অনেক সময় বগলের নিচের গ্ল্যান্ডেও চলে যায়। বগলের নিচে গেলে অপারেশনের সময় দশটির ওপরে গ্ল্যান্ড ফেলতে হয়। যার ফলে পরবর্তীকালে হাত ফুলে যায়। ক্যান্সারের ধরন ভালো না হলেও বগলে না গেলে কেমোথেরাপি দেয়া লাগে না। কিন্তু যদি বগলে যায় তবে কেমোথেরেপি দিতে হয়। অনেক সময় রেডিওথেরাপিও দেয়া লাগে। এতে চিকিৎসা খরচ অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় অর্থাৎ ছোট অবস্থায়ই ধরা পড়লে ব্রেস্ট রেখেই ক্যান্সার অপারেশন করা সম্ভব। বিশ্বের ২৬টি দেশে সরকারি পর্যায়ে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালু আছে। তবে আমাদের দেশের অনেক সামর্থ্যবান মানুষও শুধু জানার অভাবে এটুকু করেন না এবং পরবর্তীকালে ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হন।

বাংলাদেশে ব্রিটিশ অনকোপ্লাস্টিক সার্জনের তত্ত্বাবধানে ইংল্যান্ডের প্রটোকল অনুযায়ী ব্রেস্টের সব ধরনের চিকিৎসা করানো হচ্ছে। আমরা মেনিকিউর পেডিকিউর করি, ফেসিয়াল করি, ভালো জামা পরি, কিন্তু অসুস্থতা যতক্ষণ পর্যন্ত মারাত্মক আকার ধারণ না করে ততক্ষণ সেদিকে দৃষ্টিপাত করি না। অথচ নিয়মিত ব্রেস্ট স্ক্রিনিং করালে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি যেমন হ্রাস পায়।

 

লেখক:

ডা. আলী নাফিসা

কনসালট্যান্ট, অনকোপ্লাস্টিক ব্রেস্ট সার্জারি

ল্যাবএইড ক্যান্সার হসপিটাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.