আমাদের দেশে অনেকেই মলদ্বারের সমস্যায় (যেমন: পাইলস, ফিসার, ফিষ্টুলা) ভুগে থাকেন। মলদ্বারের ভেতরের অংশে ঘা বা চিরে যাওয়াকে ফিসার বলা হয়। ফিসার হলে মলদ্বারে তীব্র ব্যথা অনুভুত হয়। এ কারণে রোগী মলত্যাগ করতে ভয় পান। এনাল ফিসারকে বাংলায় গেজ বলে। এনাল ফিসারের ব্যথা কয়েক ঘন্টা বা সারাদিনও থাকতে পারে। ব্যথার কারণে রোগী ঠিক মতো বসতেও পারে না। ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত বের হতে পারে। অনেকেরই এনাল ফিসার হতে এনাল ফিষ্টুলা হতে পারে। মলদ্বারের এসব সমস্যা হলে বিশেষ করে নারীরা লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু এর চিকিৎসা সহজ।

কাদের হয়:

এনাল ফিসার বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক যে কারোই হতে পারে। তবে তরুণ বা মধ্যবয়সীদের সাধারণত বেশী হয়ে থাকে। নারী বা পুরুষ উভয়েরই এ রোগ সমানভাবে হতে পারে।

কারণ: এনাল ফিসার হওয়ার কারণগুলি নিম্নরূপ :
এনাল ফিসার হওয়ার জন্য মুলত কোষ্টকাঠিন্যই দায়ী
মলত্যাগ কালে কোথ দেওয়া, বেশী চাপ দেওয়া বা মল শক্ত হয়ে বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যায় অথবা ক্ষতের সৃষ্টি হয়

ঘন ঘন মলত্যাগ বা ডায়রিয়া হওয়া
আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ না করা, শাকসব্জী বা ফলমূল কম খেলে মল শক্ত হয়
মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে রোগটি দেখা দিতে পারে
পায়ুপথে যৌন সম্ভোগ করলে

মলদ্বারে সাপোজিটরী ব্যবহার করলে
মলদ্বারের অন্যান্য রোগ, যেমন: ক্রোনস ডিজিজ, অন্দ্রের অন্যান্য প্রদাহ, ক্যান্সার, এইডস, সিফিলিস এবং টিবির কারণেও এনাল ফিসারের সৃষ্টি হয়।

লক্ষণ:
এনাল ফিসারের প্রধান লক্ষণগুলো হলো: মলদ্বারের ব্যথা, জ¦ালাপোড়া ও রক্তক্ষরণ তবে এনাল ফিসারে রক্তক্ষরণ সাধারণত কম থাকে। মলত্যাগের স্বাভাবিক নিয়মে পরিবর্তন, মলদ্বার দিয়ে পুঁজ বা দূর্গন্ধযুক্ত তরল নিঃসরণ ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যায়।
প্রকার: লক্ষণের উপর এনাল ফিসারকে দুভাগে ভাগ করা যায়।

একিউট বা তরুণ এনাল ফিসার:
এক্ষেত্রে রোগীরা মলত্যাগের পর প্রচন্ড ব্যথা অনুভুত হয়। মলদ্বারে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, মলদ্বার খুবই সংকুচিত থাকে। ব্যথা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। অনেক সময় পায়খানার সাথে বা পরে ফোঁটায় ফোঁটায় তাজা রক্ত যেতে পারে।

ক্রনিক বা জটিল এনাল ফিসার:
এক্ষেত্রে মলদ্বারে গেজ অতিরিক্ত মাংসপিন্ড, ফোলা, চুলকানী, রস পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। রক্তক্ষরণ থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। সাধারণত তীব্র ব্যথা হয়না বা অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা একেবারেই থাকে না। এনাল ফিসার সংক্রমিত হয়ে কখনো কখনো ফোঁড়া দেখা দিতে পারে এবং ফিষ্টুলার সৃষ্টি হয়ে পুঁজরক্ত ঝরে।

প্রতিরোধ: জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন করাই এনাল ফিসার প্রতিরোধের মুল উদ্দেশ্য
কোষ্টকাঠিন্য এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে
প্রচুর ফলমুল ও শাকসবজী খেতে হবে
ইসবগুলের ভূষি খেতে হবে
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
মলত্যাগের বেগ আসার সাথে সাথে মলত্যাগের অভ্যাস করতে হবে
কোথ দিয়ে মলত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

চিকিৎসা:
যারা এনাল ফিসারে ভুগছেন, তারা সত্বর চিকিৎসা নিন। অবহেলা, অস্বস্তি করবেন না। মনে রাখা ভালো, যেকোন সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করানো সহজ, জটিলতার আশঙ্কাও কম।
সবসময় মল নরম রাখতে হবে। এক্ষেত্রে খাদ্য গ্রহনের সাথে সাথে মল নরম করার ঔষধ, মলদ্বারে জ¦ালা ও ব্যথা নিরসনের জন্য ঔষধ খেতে হবে।
সিজ বাথ নিলে উপকার হয়। পরিমাণ মত কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে ১০-১৫ মিনিট বসলে মলদ্বারের ব্যথা অনেকটা লাঘব হয়।
অনেক ক্ষেত্রে রোগটির জটিল অবস্থায় শল্য চিকিৎসা বা সার্জারীর প্রয়োজন হতে পারে।
এনাল ফিসার দেখা দিলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

 

মোঃ হুমায়ুন কবীর

কনসালট্যান্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩, নবাব কাটারা, নিমতলী, চাঁনখারপুল,ঢাকা-১০০০।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.