সব পুরুষেরই প্রোস্টেট গ্রন্থি থাকে। এটি মূত্রথলির ঠিক নিচেই অবস্থিত। প্রোস্টেট প্রস্রাবের পথ বা মূত্রনালিকে ঘিরে রাখে। প্রোস্টেট থেকে একরকমের রস তৈরী হয় যা বীর্যের সাথে মিলে সিমেন বা বীর্য রস তৈরীতে সাহায্য করে। মেয়েদের প্রোস্টেট থাকেনা। মধ্যবয়সের পর এই গ্রন্থি বড় হতে শুরু করে। বয়স যত বাড়তে থাকে প্রোস্টেট তত বড় হতে থাকে। অনেকে ভাবেন প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়া মানেই ক্যান্সার। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। প্রোস্টেট বড় হওয়া মানেই প্রোস্টেট ক্যান্সার নয়।

প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়াকে বলে হাইপারট্রফিক প্রোস্টেট। হাইপারট্রফি মানে কোষের আকারে বৃদ্ধি পাওয়া। প্রোস্টেট গ্রন্থি এভাবে বড় হয়ে গেলে বলে বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারট্রফি। সংক্ষেপে কেউ কেউ একে বিইপি বা বিনাইন প্রোস্টেটিক এনলার্জমেন্টও বলে। বিনাইন মানে নিরাপদ বা যা ক্যান্সারের মত বড় ক্ষতি করেনা। যদিও প্রোস্টেট বড় হয়ে গেলে নানারকম শারীরিক ও প্র¯্রাবের সমস্যার সৃষ্টি করে।

প্রোস্টেট বড় হয়ে গেলে বিভিন্ন উপসর্গ থাকে। সবার ক্ষেত্রে কিন্তু একইরকম উপসর্গ থাকেনা। একেকজনের একেক উপসর্গ বেশি থাকে। তবে যেসব উপসর্গ সচরাচর দেখা যায় তার মধ্যে আছেঃ

১। প্রস্রাব করার সময় কষ্ট হওয়া
২। প্রস্রাব শুরু করতে সমস্যা হওয়া বা দেরি হওয়া
৩। প্রস্রাব করার পর আবার প্রস্রাব হবে এমন অনুভূতি হওয়া
৪। প্রস্রাবের ধারা দুর্বল হওয়া
৫। বারবার প্রস্রাব হওয়া
৬। বারবার প্রস্রাবের পথে ইনফেকশন হওয়া
৭। রাতে বারবার প্র¯্রাবের জন্য ওঠা

প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়েছে কিনা ডায়াগনোসিস করা বেশ সহজ। চিকিৎসক মলদ্বারে আঙুল ঢুকিয়ে পরীক্ষা করেই বুঝতে পারেন। এতে প্রোস্টেট গ্রন্থির আকার এবং কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা বোঝা যায়। প্রোস্টেটের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি ডায়াগনোসিসের জন্যে খুব সহায়ক। প্রোস্টেট গ্রন্থির সঠিক মাপ জানতে এবং কোনো ক্যান্সার আছে কিনা জানার জন্যে আল্ট্রাসাউন্ড অপরিহার্য। এছাড়া ক্যান্সার সন্দেহ হলে প্রস্রাবের পরীক্ষা ও পিএসএ নামে আরেকটি পরীক্ষা অনেকসময় চিকিৎসক দিয়ে থাকেন। প্রস্রাব করার পর মূত্রথলিতে প্রস্রাব রয়েছে কিনা তা নির্ণয় করতে পিভিআর করা হয়। এটি করা হয় সাধারণত আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে। বেশিরভাগ পরীক্ষা আমাদের দেশে প্রায় সব জায়গাতেই হয়।

প্রোস্টেট বড় হয়ে গেলে বিভিন্ন চিকিৎসা আছে। সাইজের ও সমস্যার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। কার জন্যে কি চিকিৎসা লাগবে তা একজন ইউরোলোজিস্ট ঠিক করবেন। কারও কারও ওষুধেই কাজ হয়। আবার অনেকের অপারেশন লাগে। বর্তমানে অনেক আধুনিক পদ্ধতিতে অপারেশন করা হয়। সুতরাং ভয়ের কিছুই নেই। এখন যেসব অপারেশন হয় সেখানে মূত্রপথ দিয়ে একটা যন্ত্র ঢুকিয়ে প্রোস্টেট পর্যন্ত যেয়ে যেখানে প্রস্রাবের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সেখানকার অতিরিক্ত টিস্যু কেটে ফেলা হয়। এই অপারেশনকে বলে, ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশন অব প্রোস্টেট বা টিইউআরপি। শরীরের বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া করা হয় না। হাসপাতালে সাধারণত একদিন বা দুই দিন থাকার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে লেজার সার্জারিও চালু হয়েছে। তাই প্রোস্টেট বড় হলে ভয়ের কিছু নেই।

ডা. মোঃ ফজলুল কবির পাভেল

মেডিকেল অফিসার,
২৫০ শয্যা হাসপাতাল, জয়পুরহাট

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.