আমাদের দেশে এখন প্রচুর হাঁপানি রোগী আছে। বলা হয়ে থাকে যে সারা বিশ্বে প্রায় বিশ কোটি মানুষের হাঁপানি রোগ আছে। আমাদের দেশে কম বেশী প্রায় এক কোটি মানুষের এই রোগ আছে। পুরান শ্বাস কষ্টের সাথে নতুন কোন শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাদের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে তা বলাই যায়।

হাঁপানিতে আমাদের শ্বাসনালীর যে বিভিন্ন শাখা প্রশাখা আছে সেগুলি সংকুচিত হয়ে যায়। এতে শ্বাস নিতে এবং ছাড়তে বেশ কষ্ট হয়। হাঁপানির সঠিক কারণ আজও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে জিনগত এবং পরিবেশগত কিছু কারণকে দায়ী করা হয়। পরিবারে কারও হাঁপানি থাকলে অন্য জনের হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, বিশেষ করে ধুলিবালি, ধোঁয়া, ফুলের রেণু, প্রাণির লোম, মাইট ইত্যাদি হাঁপানির জন্য উপযোগি অবস্থা।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা স্থূলতার সাথেও হাঁপানির সম্পর্ক পেয়েছেন। যাদেন ওজন বেশি তাদের হাঁপানির প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে সারা পৃথিবীতেই ওবেসিটি বা স্থূলতা এখন একটি বড় সমস্যা। আমাদের দেশেও ওবেসিটি হানা দিয়েছে, কি শহরে কি গ্রামে সব জায়গায়ই এখন মোটা মানুষ দেখা যায়। হাঁপানির বিভিন্ন রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে একটি হচ্ছে ওবেসিটি বা স্থূলতা। ওজন যদি নিয়ন্ত্রণে না করা যায় তবে তাদের হাঁপানির নানা ধরনের সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

স্থূল ব্যক্তিরা কেন হাঁপানিতে বেশি আক্রান্ত হয় তার কারণও বর্তমানে কিছু জানা গেছে। এদের মধ্যে কিছু মেকানিক্যাল ফ্যাক্টর থাকে, অর্থাৎ এই মুটিয়ে যাওয়াটাই হাঁপানি রুগীদের শ্বাস নিতে আরও বেশী পরিশ্রমের হয়ে দাড়ায়। এছাড়া ওবেসিটি বা স্থূল মানুষদের বিভিন্ন প্রদাহ হয়ে থাকে, এই কষ্টের উপর যা প্রভাব ফেলে। ওজন যাদের বেশি তাদের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাও ঠিকমত কাজ করতে পারেনা। তাই মুটিয়ে যাওয়া মানুষরা একটু বেশী মাত্রায় হাঁপানির কবলে পরে।

নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করলে আর নিয়ম মানলে হাঁপানি অনেকটা নিয়ন্ত্রিত থাকে। ওজন কমালে এসব নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হয়ে যায়। ওজন কমালে শুধু যে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায় তা নয়। এর ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও অনেক কমে যায়। এছাড়া ওবেসিটি বা স্থূলতার সাথে নানা ক্যান্সার কিন্তু জড়িত। তাই এসব থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই শরীরের ওজন কমাতে হবে।

ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন বন্ধ করতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং ফলমূল ও শাকসবজি সহ ব্যলান্স ডায়েট খেতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওজন কমানোর ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। ওজন কমিয়ে রেখে হাঁপানির প্রকোপ থেকে অনেকটাই ভালো থাকা যায়। তাই এদিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

 

ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল

মেডিকেল অফিসার,
২৫০ শয্যা হাসপাতাল, জয়পুরহাট

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.