বেশিরভাগ অভিভাবকের অভিযোগ, তার বাচ্চা খেতে চায় না। স্বাস্থ্য ভালো না।  শিশুর ঠিক কী পরিমাণ খাবার প্রয়োজন, তা কীভাবে বুঝবেন অভিভাবক?

খাবার নিয়ে চাপাচাপিতে শিশুর কী ক্ষতি হতে পারে এক সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত বলেছেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাঈমা সুলতানা।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে অভিভাবকরা সব সময় একটা অভিযোগ করেন, বাচ্চারা খাচ্ছে না। তখন আমরা জানতে চাই, আপনি তাকে কী খাবার দেন, কতক্ষণ পর পর দেন? বাচ্চা একবার খাওয়ার পর তা হজম হতে ৩-৪ ঘণ্টা লেগে যায়। এখন আপনি তাকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরপর খাবার দিলে সে খাবে না। আবার দেখতে হবে আপনি যতটুকু খাবার দিচ্ছেন, তা শিশুর প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনা। সাধারণত তার যতটুকু খাবার প্রয়োজন, ততটুকু দিলে সে খাবে।

আমাদের দেশে অনেক অভিভাবক বাচ্চার খাবারের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করেন। এখানে সব সময় দেখতে তার যতটুকু পুষ্টি প্রয়োজন, সে পরিমাণ খাবার খাচ্ছে কিনা। আর একটা বাচ্চার ওজন যদি ঠিক থাকে, তাহলে আমরা বলে থাকি আপনার বাচ্চা প্রয়োজনীয় খাবার খাচ্ছে। এখন তাকে অতিরিক্ত খাবার দেওয়ার দরকার নেই। এজন্য আমি অভিভাবকদের বলি, বয়স অনুযায়ী আপনার বাচ্চার ওজন ঠিক থাকলে খাবার নিয়ে বেশি চাপাচাপি করবেন না। এতে তার মনের ওপর চা পড়বে।

তীব্র গরমে বাচ্চার পুষ্টি নিশ্চিতের বিষয়ে ডা. নাঈমা সুলতানা বলেন, তীব্র গরমে শিশুরা তরল জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করে। যেমন, হয়তো সে শরবত চাইবে বা স্যুপ খেতে চাইবে অথবা কোনো ঠান্ডা জিনিস খেতে পছন্দ করছে। এখানে কোনো সমস্যা নেই, সেটিই তাকে খেতে দিন। যেমন, এক গ্লাস ফলের শরবত দিতে পারেন। তবে অবশ্যই বাসায় তৈরি হতে হবে, বাজারের হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডাবের পানি দিতে পারেন। তবে আপনার বাচ্চার যদি ঠান্ডার সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঠান্ডার পরিমাণটা দিতে হবে। আর একটা বিষয় হলো, বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী খাবার দিতে হবে।

তিনি বলেন, দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মস্তিস্ক বিকাশের প্রধান সময়। এ সময় বাচ্চদের সঠিক পুষ্টিটা বেশি প্রয়োজন। এটি নিশ্চিত করলে বাচ্চাদের মস্তিস্ক বিকাশে সহায়তা করবে। আর বাচ্চা যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন মায়ের প্রতি বেশি খেয়াল রাখতে হবে। একটা শিশুর জীবন শুরু হয় শূন্যতম দিন থেকে, ভূমিষ্ট হওয়ার সময় তা ৯ মাস ১০ দিন অর্থাৎ ২৭০ দিন পূর্ণ হয়। দুই বছর পর্যন্ত মোট ১ হাজার দিন বাচ্চার মস্তিস্ক বিকাশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় একটা বাচ্চা যত বেশি পুষ্টি পাবে, তার বিকাশ ততো ভালো হবে।

বলা হয়ে থাকে, পুষ্টিতে এক ডলার বিনিয়োগ মানে তার ফল ১৬-২০ ডলার। যে বাচ্চার পুষ্টি ঠিক থাকে, তার অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এজন্য আমি সব সময় বাচ্চার পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখতে বলি। একটি বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাবে। তাহলে তার অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা কম।

ডা. নাঈমা সুলতানা বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত যেসব বাচ্চারা মায়ের দুধ ব্যতীত অন্য কোনো খাদ্যের ওপর নির্ভর, তারা বেশি অসুস্থ হচ্ছে। শিশুর পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখলে তারা সব সময় সুস্থ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ছয় মাস পর থেকে শিশুকে সম্পূরক খাবার খাওয়াতে হবে। আর এটি হতে হবে বাড়ির খাবার, হাড়ির খাবার। একটা শিশুর পাকস্থলী অনেক ছোট থাকে, তাই সাধারণত আমাদের চেষ্টাটা থাকবে শিশুরা যাতে পরিপূর্ণ পায়।

 

ডা. নাঈমা সুলতানা

ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.