রমজানে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আসে। এর সাথে মানিয়ে নিতে হয়। বিশেষ করে আমাদের অঞ্চলে রোজাদাররা ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার পছন্দ করে। এতে ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বদহজমসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়।

এসব থেকে ভালো থাকার উপায় সম্পর্কে সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত বলেছেন ল্যাবএইড হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইসরাত জাহান।

তিনি বলেন, বছরের ১১ মাসের খাদ্যাভাস এক রকম থাকে। আর রমজানে অন্য রকম। এখন গরমের সময় আমাদের প্রায় ১২ ঘণ্টা রোজা রাখতে হচ্ছে। সারা দিন রোজা থেকে ইফতার ভাজাপোড়া খাবার দিয়ে শুরু করছি। ভাজাপোড়া খাবার মুখরোচক হলেও এগুলো খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এ খাবারগুলো অনেক তেল দিয়ে ভাজা হয়। এতে অতিরিক্ত তেল শুধু আমাদের ত্বকেরই না, শরীরের অনেক ইন্টারনাল অর্গানের ক্ষতি করে। যাদের ব্রণের সমস্যা রয়েছে, ভাজাপোড়া খেলে তাদের ত্বক আরও তৈলাক্ত হয়। এতে ব্রণের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। শুধু যে ব্রণের সমস্যা বাড়ে তা নয়, যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

এছাড়া ভাজাপোড়া খেলে শরীরে মেদ বেড়ে যায়। রোজার মাস সংযমের মাস। আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে সুস্থভাবে রমজান পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইফতারে ভাজাপোড়া না খেয়ে খেজুর অথবা ফলের জুস, শরবত খেলে ভালো হবে। অবশ্য ফলের জুস কিংবা শরবত চিনিমুক্ত হতে হবে।

করোনার কারণে দীর্ঘ সময় মাস্ক পরতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ত্বকের যত্নে করণীয় বিষয়ে ডা. ইসরাত জাহান বলেন, করোনা প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে। আমরা সাধারণত সার্জিক্যাল অথবা কেন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করে থাকি। সার্জিক্যাল মাস্কগুলো সাধারণত ওয়ান টাইম। এগুলো পরে আমরা বাইরে গেলে, বাসায় ফিরেই ফেলে দেব। সার্জিক্যাল মাস্ক শুধু করোনা নয়, ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করবে। সুতার কাপড়ের যেসব মাস্ক আছে, সেগুলো অবশ্যই ঠিকমতো পরিষ্কার করে ব্যবহার করা উচিত এবং সাথে একাধিক রাখা উচিত। কাপড়ের মাস্ক টানা দুদিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

কেএন৯৫ মাস্ক সাধারণত স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যবহার করেন। এগুলো মুখের সাথে আঁটোসাঁটো হয়ে লেগে থাকায় ত্বককে সংক্রমণের পাশাপাশি মাঝে মাঝে ইনজুরও করে ফেলে। এজন্য কেএন৯৫ ব্যবহারের আগে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। এছাড়া গরমে মাস্ক পরায় অনেকের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে মুখে ব্রণ দেখা দেয়। এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মাস্ক পড়তে হবে এবং মেকআপ রিমুভ করার যে স্যানিটাইজ পেপার আছে, সেগুলো সাথে রাখতে হবে। ত্বক অনেক তৈলাক্ত হলে স্যানিটাইজ পেপার দিয়ে মুছে নিতে হবে। তাহলে ত্বকের সমস্যাগুলো কম হবে।

ডা. ইসরাত জাহান বলেন, রমজানে পানি কম খাওয়ার ফলে শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দেয় এবং শরীরে কোলাজেনের ব্রেকডাউন হয়। এতে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয় এবং অল্প বয়সে ত্বকে বয়সের ছাপ স্পষ্ট হয়। রমজানে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি খেতে হবে। এতে ত্বকের সমস্যাগুলো অনেক কমে যাবে। শরীরের ইন্টারনাল অর্গানগুলো ভালো থাকবে।

টিউব মেহেদি ব্যবহারে সাবধানতার বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদের আগে আমরা সবাই কমবেশি মেহেদি পরে থাকি। মেহেদি গাছের পাতার রস থেকে যে মেহেদি পাওয়া যায়, এগুলো ত্বকের জন্য খুবই ভালো। কারণ, এটা ত্বকবান্ধব এবং অ্যালকোহলমুক্ত। প্রাকৃতিক মেহেদি না পেলে টিউব মেহেদি কেনার আগে এর উপাদানগুলো দেখে নিতে হবে। কিছু কিছু উপাদান মেহেদিতে থাকে যেমন, বেনজিন, কালারিং এজেন্ট। এগুলো বেশি মাত্রায় থাকলে ত্বকের খুবই ক্ষতি করে। এসব উপাদানের মেহেদি হাতে পরলে র‌্যাশ হয়, চামড়া ফুলে যায় ও এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে এলার্জি লেভেল গুরুতর হলে হাতে ফোসকার মত ফুলে যায়। এজন্য টিউব মেহেদি কেনার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

 

ডা. ইসরাত জাহান

ল্যাবএইড হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.