সবাই কেমন আছেন? ইনবক্সে ইনফেন্টাইল কলিক নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন এসেছে। আলাদা করে উত্তর না লিখে আমি এখানেই এই ব্যাপারে আলোচনা করছি। শিশুরা কান্না করে। অনেক বাচ্চা বেশি অনেকে কম। এটা শিশুর ভাব প্রকাশ করার একটা ধরন ও বলা যায়।

অতিরিক্ত কান্না কি :

অতিরিক্ত কান্না তখনই বলা হয়, যদি কোনো শিশু সপ্তাহে অন্তত তিন দিন, দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কান্নাকাটি করে।

কাদের হয়?

কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে এই অতিরিক্ত কান্নার প্রবণতা সর্বাধিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন কান্নার কারণ অজানা।এরই নাম ইনফ্যান্ট কলিক।

কেন হয়?

* অজানা কারণে পেট ব্যথার জন্যই এই কান্না।বলা হচ্ছে, কোনো বিচিত্র কারণে অন্ত্রের সংকোচন, পেটে গ্যাস বা ল্যাকটোজ অ্যালার্জি এই কান্নার কারণ হতে পারে।

* এটি স্বাভাবিক কান্নাও হতে পারে, যা অনেক সময় অভিভাবকেরা অতি সচেতনতা বা অতি দুশ্চিন্তার কারণে বেশি বলে ভাবছেন।

* ৬ মাস বয়সের আগেই বাচ্চাকে গরুর দুধ কিংবা ফর্মুলা বা কৃত্রিম দুধ পান করানোর কারণেও ইনফ্যান্টাইল কলিক হতে পারে।

* বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যতা থাকলে বাচ্চা পেট মুচড়ে কান্না করতে পারে।

* পেট ফাঁপা বা বদহজম বাচ্চার কান্নার কারণ হতে পারে।

* সঠিক নিয়মে এবং পজিশন ঠিক না করে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালে, সে সময় বাচ্চার পেটে গ্যাস ঢুকে যায়। দুধ খাওয়ানোর পর এই গ্যাস ঠিকমত বের করে না দিলে বাচ্চা অস্বস্তিতে ভোগে এবং কান্না করতে থাকে।

* শিশুকে ঠিকমতো কোলে না নেওয়া থেকে স্ট্রেস।

* শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া।

* পেটের সমস্যা যেমন গ্যাস্ট্রাইটিসজনিত সমস্যা।

* মায়ের যদি কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকে আর মা যদি সেই খাবার খায় যেমন গরুর মাংস,  গরুর দুধ ইত্যাদি তখন সেই মায়ের দুধের মাধ্যমে বাচ্চার মধ্যেও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়ে বাচ্চার ইনফ্যান্টাইল কলিক হতে পারে।

* ইনফেকশন যেমন ইউরিন ইনফেকশন, কানের ইনফেকশন, জ্বর ইত্যাদি হলে বাচ্চা অনেক কান্নাকাটি করে। এসব কারণেও বাচ্চা কান্নাকাটি করতে পারে, তবে তখন সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করতে হবে। একে ইনফ্যান্টাইল কলিক এর সাথে তুলনা করা যাবে না।

 লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?

* যখন শিশুরা কোলিকের আক্রমনের সম্মুখীন হয় বা এটির প্রবণতাযুক্ত হয়, তখন এইগুলি আপনি লক্ষ্য করতে পারেন:

* অনিয়মিত ঘুম বা ঘুম ভেঙে যাওয়া

* অনিয়মিত খাবারের ধরণ এবং কান্নাকাটির দ্বারা খাওয়া বিঘ্নিত হওয়া।

* অস্থিরতা

শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিকতার অনুভূতি – শক্ত মুষ্টি, বাঁকা পিঠ, হাটু জোড়া করে ভেতরের দিকে ঢোকানো এবং পেটের পেশী আড়ষ্ট

অনবরত কান্না, বিরক্ত করলে কোন প্রতিক্রিয়া না করা,

অনেক সময় কান্না করতে করতে শ্বাস বন্ধ করে ফেলে।

প্রতিদিন একই সময়ে বিরক্তি এবং অস্বস্তি হওয়ার লক্ষণ

প্রায়ই সন্ধ্যায় কান্নাকাটি হয়।

বাচ্চা মুখে দুধ নিতে চায় না। বিরতিহীনভাবে কান্না করতেই থাকে।

কান্নার ফলে পিতামাতার হতাশা, প্রসবের পর বিষণ্নতা , ডাক্তারের কাছে অতিরিক্ত পরিদর্শন এবং শিশু নির্যাতন হতে পারে ।

কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?

ডাক্তারেরা সাধারণত কোলিক হওয়া শিশুর রোগ ধরার আগে তার কষ্টের অন্য কোন সম্ভাব্য কারণ বাতিল করতে পরীক্ষা করেন।

এই ক্ষেত্রে পিতামাতাকে কাউন্সেলিং করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা।

১. অধিকাংশ চিকিৎসকেরা ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন।কারন এই সমস্যা নিজ থেকেই বয়সের সাথে ঠিক হয়ে যায়।

২. ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা সন্দেহ হলে গরুর দুধ এড়াতে পারেন, বা শিশুকে যদি বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তাহলে তার মা নির্দিষ্ট কিছু খাবার বন্ধ করতে পারেন।

৩. রকিং, স্বোয়াডলিং এবং প্যাসিফায়ার ব্যবহার করতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়া হয় এবং তা কাজ ও করে।

৪. খাবার পরে ঢেকুর, এবং গোসলের আগে তেল মালিশ করা খুবই সহায়ক।

৫. বাচ্চাকে টামি টাইম দিন।এটা অনেক সহায়ক।অনেক ভিডিও আছে এটা নিয়ে। দেখে দিতে পারেন।

৬. সাইকেল চালানোর মতো করে পায়ের ব্যায়াম করাতে পারেন।

বাচ্চাদের এ ধরণের সমস্যার সমাধানে মেডিসিনে তেমন একটা উপকার পাওয়া যায় না। তারপরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টি কলিক মেডিসিন ব্যবহার করা যায়, তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক মাত্রা অনুযায়ী দিতে হবে।

 

ডাঃ তাজরিনা রহমান জেনি 

এমবিবিএস, ডিসিএইচ (শিশু) (বিএসএমএমইউ-পিজি হাসপাতাল), এফসিপিএস (শিশু)- ফাইনাল পার্ট, নবজাতক, শিশু ও কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ।

নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.