দৈনন্দিন জীবনে আমরা একটানা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করি। কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করি। দাঁড়ানো বা বসে কাজ করার মধ্যে প্রতি ৪৫ মিনিট পর অন্তত পাঁচ মিনিটের বিরতি নেয়া উচিত, না হলে মেরুদণ্ডের হাড় ও কোমরের মাংস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানে জেলির মতো বস্তু থাকে, যাকে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক বলে। কোনো কারণে এই ডিস্ক সরে গেলে তখন একে ডিস্ক হার্নিয়েশন বা ডিস্ক প্রলাপস বলা হয়। রোগটি নির্ণয়ের জন্য ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি এমআরআই করা দরকার হয়। ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম ও বিশ্রামÑএ চারটি বিষয়ের সমন্বয় করতে পারলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রতিটি কশেরুকার দুই পাশ দিয়ে স্পাইনাল নার্ভ বা স্নায়ু বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে গেছে। এ নার্ভের যে রুট বা উৎপত্তিস্থল, সেখানে একটি ক্যানেল বা খাল আছে, যা দিয়ে নার্ভটি বের হয়ে আসে। এই ক্যানেলের মধ্যে চাপ পড়লে নার্ভের চলার পথ অনুযায়ী ব্যথা অনুভূত হয়। আক্রান্ত হাত বা পা ভারী অনুভব হয়। যদি প্রাথমিক বা মধ্যম অবস্থানে থাকে তাহলে কনজারভেটিভ চিকিৎসার মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব। কিন্তু যদি তীব্র মাত্রার হয়, তবে স্পাইনাল সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে। অনেক সময় কশেরুকাগুলোর পার্শ্ববর্তী অংশে হাড় বেড়ে যায়। একে অস্টিওফাইট বলা হয়। দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানের স্পেস কমে যাওয়াকে স্পনডাইলোসিস বলে। সমস্যাটি ঘাড়ে হলে বলে সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস ও কোমরে হলে লাম্বার স্পনডাইলোসিস। এটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি এক্স-রের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে সুস্থ হওয়া যায়। রোগীকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন সামনের দিকে ঝুঁকে ভারী কাজ না করা, ভ্রমণের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা, নিচু হয়ে কিছু ওঠানোর সময় হাঁটু ভেঙে বসে ওঠানো প্রভৃতি।

বাংলাদেশে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি খুবই সাধারণ ঘটনা, বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। এ ছাড়া বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন সাইটে ইনজুরি, গাছ বা ওপর থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়মিতই ঘটে। ঘাড়ের অংশে ইনজুরি হলে সম্পূর্ণ চার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে। নিচের দিকে হলে দুই পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীর দ্রুত সার্জারির প্রয়োজন পড়ে। ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ।

মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক গঠন এতে একপাশে বাঁকা হয়ে ইংরেজি লেটার ‘এস’ আকৃতির হয়ে যায়। রোগের প্রাথমিক ও মধ্যম অবস্থায় ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। যদি তীব্র মাত্রার হয়, তখন অস্ত্রোপচার দরকার পড়ে। তবে এর আগে-পরে স্পাইনাল মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ব্যাপ্তি বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মেরুদণ্ডে টিবি বা যক্ষ্মা হলে তাকে টর্স ডিজিজ বলা হয়। এটি সাধারণত থোরাসিক বা পিঠের অংশে দেখা দেয়। অ্যান্টি টিবি ড্রাগের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ রাখা হয়।

 

এম ইয়াছিন আলী

চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট

ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.