ডায়ালাইসিস কি, কেন এবং কিভাবে করা হয় ?

ডায়ালাইসিস হচ্ছে কৃত্রিম উপায়ে, যন্ত্রের সাহায্যে রক্ত পরিশোধন বা রক্ত বিশুদ্ধ করার একটি কার্যকর চিকিৎসা প্রক্রিয়া। স্বাভাবিকভাবে “কিডনি” সার্বক্ষণিকভাবে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে দিয়ে আমাদেরকে সুস্থ রাখে। তবে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীদের , কিডনির কার্যকারিতা অনেকটা কমে গেলে বা তা নষ্ট হয়ে গেলে, একসময়ে কিডনি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে। ডায়ালাইসিস করলে কিডনি ভাল হয় না। তবে নিয়মিত ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে কিডনির অধিকাংশ প্রয়োজনীয় কাজ সারিয়ে নিয়ে অনেকটা ভাল থাকা যায়। এ প্রক্রিয়ায় ডায়ালাইসিস সেন্টারের বিশেষ তত্ত্বাবধানে, কৃত্রিম কিডনি বা ডায়ালাইজারের সাহায্যে রক্ত থেকে শরীরের বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি ) ও অতিরিক্ত পানি অপসারন করা হয়। ডায়ালাইসিসের ফলে সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও বাইকার্বনেটসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইটের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে।

ডায়ালাইসিসকারীদের ভালো থাকা-

অকেজো বা অথর্ব কিডনি নিয়ে ডায়ালাইসিসকারী রোগীরা অনেকটা সুস্থভাবে চলতে পারে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা (দিনে ৩-৪ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ১ দিন, ২ দিন, ৩ দিন), পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, বাছবিচার করে খাদ্য খাওয়া ও নির্দেশমতো পরিমিত পানি পান করা অবশ্যই দরকার। তাছাড়া রোগীকে ‘কিডনী রোগ’ ও ‘ডায়ালাইসিস’ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন, আনন্দের মধ্যে সময় কাটানো, সম্ভব হলে চাকুরী বা কাজকর্মে ব্যস্ত থাকা ও নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি (২-৩ জন মিলে) করতে পারলে তার দুর্বলতা কমে এবং শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়।

পরিশেষে:-

ডায়ালাইসিস একটি মোটামুটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা প্রক্রিয়া। একবার ডায়ালাইসিস শুরু করলে সাধারণত জীবনভর তা চালিয়ে যেতে হয়। এর একটি সেশনও মিস করা যায় না। শ্বাসপ্রশ্বাসের মত এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া। নিয়মিত ভাবে ডায়ালাইসিসের খরচ যোগাতে গিয়ে অনেককে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়। অনেকে আবার সংসার খরচের পাশাপাশি, তার ব্যয়সংকুলানের কথা চিন্তা করে ডায়ালাইসিসই করে না বা শুরু করার কিছুদিন পর তা বন্ধ করে দেয় এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। সরকারী অনুদান বা ভর্তুকি ও বিত্তবানদের সাহায্য সহযোগিতা পেলে, অনেকের পক্ষে নিয়মিতভাবে ডায়ালাইসিস চালিয়ে যাওয়া অনেকটা সহজ হয়, আরও কিছুদিন তারা সুস্থভাবে বেঁচে থেকে পৃথিবীর আনন্দ উপভোগ ও স্রষ্ঠার গুণগান করতে পারে। কার্ডিয়াক পেসমেকারের মত শরীরে বহনযোগ্য কমদামে ডায়ালাইজার মেশিন তৈরির ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা অনেকদুর এগিয়েছেন। এটি সম্ভব হলে অনেকেই বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারেন, তাদের হয়রানি ও পরনির্ভরশীলতাও অনেকটা কমে যাবে ।

 

ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ

মেডিসিন ও স্নায়ুরোগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.