দেশে বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রাথমিক স্তরে রোগটি শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ না করলে পরবর্তী সময়ে এটি মৃত্যুরও কারণ হয়। আর ক্যানসার নির্মূলে সবার আগে প্রয়োজন জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলা।

প্রশ্ন: ফুসফুস ক্যানসার কেমন হতে পারে?

ফুসফুস ক্যানসার প্রাইমারি হতে পারে; ফুসফুসে ইটসেল্প (নিজেরই) ক্যানসার। এছাড়াও অন্য জায়গা থেকেও ফুসফুসে ক্যানসার আসতে পারে যাকে বলা হয় সেকেন্ডাইজ। অন্য অর্গান থেকে যেমন- লিভার থেকে, নাড়িভুড়ি থেকে। কিডনি ও ব্রেস্ট (স্তন) থেকেও আসতে পারে। প্রাইমারি ফুসফুস ক্যানসার হলো যদি ফুসফুস ইটসেল্প (নিজেই) আক্রান্ত হয়। ফুসফুস থেকে অরিজিন (উৎপত্তি); এটা সেন্ট্রালও হতে পারে আবার পেরিফেরিও (প্রান্তিক) হতে পারে। ফুসফুসের মাঝখানে হতে পারে। মিডলাইনে হতে পারে। পেরিফেরিও হতে পারে।

ফুসফুস আমাদের শ্বাসযন্ত্রের মেইন অর্গান। দুইটা ফুসফুস থাকে। যে কোনোটাই আক্রান্ত হতে পারে। এক ফুসফুস থেকে আরেকটিতে ছড়িয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: কত ধরনের হতে পারে ফুসফুস ক্যানসার?

অন্যান্য ক্যানসারের মতো ফুসফুসের ক্যানসারকে চারটি স্তরে ভাগ করা যায়। স্টেজ ওয়ান, স্টেজ টু, স্টেজ থ্রি, স্টেজ ফোর- এ চারটি স্টেজে ভাগ করা যেতে পারে। আর্লি স্টেজ বলা হয় যদি থ্রি সেন্টিমিটার বা তার চেয়ে ছোট হয় এবং সেটা যদি মিডলাইন থেকে দূরে হয়। অন্য কোনো ইনভলভমেন্ট না থাকলে এটাকে স্টেজ ওয়ান বলা হয়। যদি থ্রি সেন্টিমিটারের চাইতে সাইজে বড় হয়, অন্য অর্গান ইনভলভ হয়। যেমন- হার্ট ইনভলভ হলেই স্টেজ টু। এভাবেই হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: ফুসফুস ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী?

ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কোনো উপসর্গ থকে না কিছু রোগীর। অন্য কোনো কারণে এক্স-রে করতে গেলে অনেক সময় ধরা পড়ে। এছাড়াও আর্লি স্টেজে কাশি থাকে। অনেকদিন থেকে কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত যায়। ব্লাড মিশ্রিত শ্লেষ্মা। শরীর শুকিয়ে যাওয়া। ওজন কমে যাওয়া। খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া। আরেকটু বেশি মাত্রায় হলে হাড়ে ব্যথা। লিভারে গেলে জন্ডিস আকারে দেখা দিতে পারে। খেতে পারেন না। আর্লি স্টেজে হার্ট ইনভলভড হলে হার্টের স্পন্দন পরিবর্তন হয়ে যায়। বুকে ব্যথা হয়। পালস্ রেইট বেড়ে যায়। হাড়ে হলে খুব ব্যথা হয়। হাতে হলে হাতে ব্যথা হয়। মেরুদণ্ড হলে সেখানে ব্যথা হয়। পায়খানা প্রস্রাব ঠিক মতো হয় না, ঠিক মতো করতে পারে না বা ধরে রাখতে পারে না। অবশ হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে কি এ রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব?

স্ক্রিনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ফুসফুস ক্যানসার তেমন একটা শনাক্ত করা যায় না। ব্রেস্ট ক্যানসার, জরায়ু ক্যানসার, জিআইটি ক্যানসার, কোলন ক্যানসারের ক্ষেত্রে করা হয়। কিন্তু ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি বিশ্বে খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে স্ক্রিনিং করলে, শুরুতে ধরা পড়লে এবং চিকিৎসা করলে রোগীর ভোগান্তি কম হয়।

প্রশ্ন: দেশে এ রোগের চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যয়…

যে কোনো ক্যাসনারের চিকিৎসা তিন রকমের। তিনের একাধিকও হয় অনেক সময়। আমরা যে স্টেজের কথা বলেছি, স্টেজ ওয়ান। স্টেজ টু হয়ে থাকলে কেটে ফেলে দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। এক্ষেত্রে রোগী অন্য রোগে আক্রান্ত যদি না হয়, বয়স যদি কম হয় এবং শ্বাসকষ্ট না থাকে। এ জন্য আর্লি স্টেজে হলে কেটে ফেলে দিয়ে কেমো থেরাপি দিলে রোগী ভালো থাকে সার্জারি করাতে পারলে। সার্জারি ছাড়া কেমো থেরাপি, রেডিও থেরাপিও করা যায় আর্লি স্টেজে। এছাড়াও এখন আরও কিছু থেরাপি বের হয়েছে। কিছু মেডিসিন বের হয়েছে।

আমাদের দেশে আধুনিক চিকিৎসা আছে। তবে জনসংখ্যার তুলনায় রেডিও থেরাপির সেন্টার কম। হাসপাতাল কম। সব রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারে না। কেমো থেরাপি বা সার্জারি বাংলাদেশে সাধারণত বক্ষব্যাধি হাসপাতালে হয়। এছাড়াও প্রাইভেট হাসপাতালে হয়, যেখানে গরিব রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না, অপারেশন করাতে পারে না।

প্রশ্ন: ফুসফুস ক্যানসারে ধূমপান ও তামাকের প্রভাব কতটুকু?

ফুসফুস ক্যানসারের ৯০ ভাগই হয় ধূমপান বা তামাক জাতীয় পণ্য সেবনের কারণে। যারা প্রতিদিন ২০-৩০টি বিড়ি বা সিগারেট পান করে তাদের ফুসফুস ক্যানাসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। এছাড়াও তাদের আশপাশে যারা থাকে তারাও আক্রান্ত হয়ে থাকে।

 

প্রফেসর ডাঃ মো: ইয়াকুব আলী

বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অফ মেডিকেল অনকোলজি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

এমবিবিএস, এফসিপিএস (রেডিওথেরাপি), এফআরএসএইচ (লন্ডন), এইএইএ ফেলোশিপ (রেডিওথেরাপি) ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.