থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। ত্রুটিযুক্ত জিনের কারণে এ রোগ হয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের শরীরে রক্তের লোহিতকণিকা (হিমোগ্লোবিন) পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয় না। ফলে এদের মারাত্মক রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

থ্যালাসেমিয়া রোগীরা প্রতি মাসে এক-দুই ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। চিকিৎসা না করা হলে এই রোগী রক্তশূন্যতায় মারা যায়। বাবা-মা বাহক হলে শিশুর এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ।

মানবকোষে রক্ত তৈরি করার জন্য দুটি জিন থাকে। কোনো ব্যক্তির রক্ত তৈরির একটি জিনে ত্রুটি থাকলে তাকে থ্যালাসেমিয়া বাহক বলে, আর দুটি জিনেই ত্রুটি থাকলে তাকে থ্যালাসেমিয়া রোগী বলে।

আমাদের কাছে একজন জানতে চেয়েছেন, তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তিন মাস আগে তার বিটা থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়েছে। নিয়মিত গরুর গোশত ও কলিজা খাচ্ছে। কিন্তু হিমোগ্লোবিন বাড়ছে না। বিটা থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ার পর নিশ্চয় আপনারা চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে আছেন। স্ত্রীর পাশাপাশি আপনারও থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। অনেক সময় আমরা মনে করি, শারীরিক কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, আমার তো রক্তশূন্যতা নেই।

এতটা আত্মবিশ্বাসী না হয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। সবার আগে অবশ্যই গর্ভবতীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বামীরও হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোপ্রসেস দেখতে হবে। সুস্থ শিশুর জন্মের জন্য এটি প্রয়োজন। মায়ের রক্তশূন্যতার কারণে তিনি ও তার অনাগত শিশু চরম ঝুঁকিতে আছে। তবে এ ঝুঁকিটা কমানোর জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে আপনাদের। এখনই মাকে সুস্থ করে তোলা গেলে সুস্থ সন্তান পৃথিবীতে আসবে। এজন্য সব সময় মাকে ফলোআপে রাখতে হবে। যেহেতু রক্ত তৈরি হচ্ছে না, নিয়মিত রক্ত দিতে হবে। সব সময় হিমোগ্লোবিন ৯-১০ রাখতে হবে ও প্রতি মাসে চেক করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ দিন পরপর চেক করাতে হবে।

আর অবশ্যই স্বামীকে পরীক্ষার আওতায় আসতে হবে। কারণ, তারও রোগটি ধরা পড়লে শিশু এটি নিয়ে জন্মানোর ২৫ শতাংশ ঝুঁকি রয়েছে। একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, শিশু জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন ইনফেকশন, শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি।

থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনো সহজলভ্য স্থায়ী চিকিৎসা বা টিকা নেই। এ রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়া বাহক হন, শুধু তখনই সন্তানদের এ রোগ হতে পারে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দুজনের একজন যদি বাহক হন এবং অন্যজন সুস্থ হন, তাহলে কখনো এ রোগ হবে না। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না, তা সবারই জেনে নেওয়া দরকার। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামে একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না, তা নির্ণয় করা যায়।

আরেকজন জানতে চেয়েছেন, চারবার সিজারে সন্তান হয়েছে। সর্বশেষ তিন মাস আগে। এ অবস্থায় কাপড় ধোয়া, ভারী কাজ করা সম্ভব কি না? যে কোনো অস্ত্রোপচারের পর আমরা সাধারণত রোগীকে তিন মাস ভারী কাজ করতে নিষেধ করি। তিন মাস পার হওয়ায় বাসার কাজগুলোতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে হবে। অনেকে মনে করেন, সিজার হয়েছে, কোনো কাজ করা যাবে না, এটি ভুল। কাজ করতে পারেন, তবে এক দিনেই সব কাজ করে ফেলবেন, এটি যে না হয়। ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে কাজ বাড়াতে হবে। ভারী কাজ করার সময় একটি বেল্ট ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যাবে। একই সাথে আপনাকে পুষ্টিকর খাবার-দাবার খেতে হবে।

 

ডা. দীনা লায়লা হোসেন

স্ত্রী রোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.