গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্ত চাপ থেকে পরবর্তীতে হার্ট ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। বিশেষজ্ঞগণ উল্লেখ করেছেন গর্ভাবস্থায় শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ মহিলা উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। এ সময় গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপ ১৪০/৯০ মি.মি. অব মারকারির চেয়ে বেড়ে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় প্রি-একলামশিয়া আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রি-একলামশিয়ার লক্ষণ হচ্ছেÑ

(১) ইউরিনে প্রেটিন নির্গত হওয়া ও
(২) উচ্চতর রক্তচাপ।
এর সাথে (৩) খিঁচুনী শুরু হলে তখন তা হয়ে যায় একমশিয়া, যা মায়ের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণায় বিশেষজ্ঞগণ দেখেছেন গর্ভাবস্থায় যাদের উচ্চ রক্তচাপ ছিল তাদের শতকরা ১২.৪ ভাগের কিডনির সমস্যা বা কিডনি আকেজো হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। তাই গর্ভাবস্থায় কোনভাবেই উচ্চ রক্তচাপ অবহেলা করা উচিত নয়।

এন্টিনেটাল চেকআপের সময় বা সন্তান আগমনের পর থেকে যেসব স্বাভাবিক চেকআপকরণ হয় তখন অবশ্যই রুটিন পরীক্ষার পাশাপাশি ইউরিন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। গর্ভকালীন প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে এবং যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া গেলে একদিকে মা ও সন্তানের জীবনের ঝুঁকি যেমন কমানো যায় তেমনি পরবর্তীতে কিডনি ও হৃদরোগ সমস্যা খানিকটা হলেও রোধ করা যায়।

গর্ভধারণের আগেই যেসব রোগীর অত্যাধিক উচ্চ রক্তচাপ ছিল তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হয়। এসব ক্ষেত্রে হৃদ প্রেসারগত চাপের মাত্রা ২০ মি.মি বাড়লেই উচ্চ রক্তচাপের আগে প্রাক-একলামশিয়া যুক্ত হয়েছে বলে ধরা যেতে পারে।

যদিও গর্ভাবস্থায় উদ্ভুত রক্তচাপের কারণতত্ত্ব এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট তবুও অভিজ্ঞতাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা দ্বারা মা ও গর্ভ-শিশু উভয়ে রোগ পরিণামে যথেষ্ঠ উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে। এটাও সম্ভব যে সাম্প্রতিক বছরগুলোর এ রোগের তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হচ্ছে রোগ নির্ণয়। যেহেতু গর্ভপ্রান্তে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেশি থাকে যেহেতু গর্ভকালীন পরীক্ষার জন্য সাক্ষাতের সময় আরও ঘন ঘন হওয়া উচিত প্রতিসাক্ষাতে রোগীর ওজন মাপা হয়, পায়ের গোড়ালিতে আঙ্গুলে এডিমা বা শোথ দেখা হয় বিশ্রামকালীন রক্তচাপ লিপিবদ্ধ করা হয় এবং প্রটিনের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয়।
রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমি.-এ পৌঁছলে কিংবা হৃদপ্রসারণগত চাপ প্রথম লিপিবদ্ধ চাপের চেয়ে ২০ মিলি. বেশি হলে মহিলাকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত এবং রেগুলার রক্তচাপ ও প্রস্রাব পরীক্ষা করা উচিত। রক্তচাপের বৃদ্ধি অথবা আমিষ মেহ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তির উপদেশ দেয়া হয়।

চিকিৎসার উদ্দেশ্যে হচ্ছে মাকে আহত না করে একটি জীবিত ও যথাসম্ভব পরিণত শিশু লাভ করা। চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে বিছানায় বিশ্রাম নেয়া। সাধারণত এর ফলে রক্তচাপ স্থিতিশীল হয়ে আসে। যেহেতু বিশ্রামের সময় জরায়ুতে রক্ত প্রবাহ অপেক্ষাকৃতভাবে বেড়ে যায় সেহেতু গর্ভস্থ শিশুর শিশুর বৃদ্ধিও অধিক ভালো হয়। প্রয়োজন হলে মাকে রক্তচাপ কমানোর ওষুধ সেবন করতে দেয়া হয়। কখনও কখনও মাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করতে এবং ঝুঁকি কমাতে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানো হয়।

ডা. রিজওয়ানা হাসান

সহকারী অধ্যাপক

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.