ডায়াবেটিসের রুগী নাই এমন কোন পরিবার মনে হয় আর আমাদের দেশে নাই। তাই এই রুগীদের ব্যাবস্থাপনা অবশ্যই পরিবারের সবার জানা থাকতে হবে। কারন রুগী যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তিনি নিজে আর তেমন কিছুই করতে পারেন না। ওষুধ সেবন করে রুগী তার রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখবেন এমটাই নিয়ম। তবে কখনও কখনও গ্লুকোজ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে খুব বেশী বা খুব কম হয়ে যেতে পারে। আর স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে এই কম হয়ে যাওয়ার নামই কিন্তু হাইপোগ্লাইসেমিয়া। হঠাৎ করে যদি ডায়াবেটিসের রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় তবে সর্বপ্রথম হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কথা মাথায় রাখা উচিত। হাইপোগ্লাইসেমিয়া মানে রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া। ডায়াবেটিকদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেশী থাকে। হঠাৎ করে গ্লুকোজের পরিমান কমে গিয়ে বিপত্তির সৃষ্টি হয়। এ সময় যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তবে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি রুগীর মৃত্যুও হতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে রক্তে গ্লুকাজের পরিমান ২.৫ মিলিমোল/লিটার এর কম হয়ে যায়।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার অনেক কারণ আছে। তবে সাধারণ কিছু কারণ আছে যার জন্য হাইপোগ্লাইসেমিয়া বেশী হয়। যেমনঃ

১। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা।
২। কোন বেলার খাবার না খাওয়া বা খেতে ভুলে যাওয়া।
৩। ইন্সুলিনের ডোজ বেশী নেয়া।
৪। মুখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের ওষুধ বেশী খাওয়া।
৫। এলকোহল সেবন
৬। লিভার ও কিডনীতে সমস্যা থাকলে।

এসব কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বেশী হয়। তবে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আরও কিছু কারন আছে। হাইপোগ্লাইসেমিয়াকে মৃদু, মধ্যম ও তীব্র ধরনের এভাবে ভাগ করা হয়। সবচেয়ে বিপদজনক তীব্র হাইপোগ্লাইসেমিয়া। তীব্র হাইপোগ্লাইসেমিয়ার দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। এই সময়ে রুগীকে দ্রুতই ডাক্তারের কাছে নিতে হবে, প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হবে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার রোগীদের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়ঃ-

১। অস্বস্তিবোধ।

২। অস্থিরতা।

৩। ঘাম হওয়া।

৪।বমিভাব, বমি।

৫। বুক ধড়ফড় করা।

৬। বিভ্রান্তি।

৭। জ্ঞান হারিয়ে ফেলা।

৮।তন্দ্রাভাব।

৯। অস্পষ্টভাবে কথা বলা।

১০। মাথা ব্যথা।

১১। হঠাৎ ক্ষুধা লাগা।

১২। হঠাৎ ভাবাবেগ বা আচরণের পরিবর্তন।

১৩। হাত পা কাঁপা।

১৪। খিঁচুনি।

১৫। চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি।

তবে সব রোগীরই যে একরকম লক্ষন থাকবে তা নয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন লক্ষন দেখা দেয়। ঘুমের মধ্যেও হাইপোগ্লাইসেমিয়ার হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীরা অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখে, ঘাম হয়, কাঁপাতে থাকে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বিভিন্ন সমস্যার শিকার হন।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া ডায়াগনসিস সহজ। একজন ডায়াবেটিক রুগীর উপরোক্ত লক্ষণ দেখা গেলে প্রথমেই হাইপোগ্লাইসেমিয়া সন্দেহ করা উচিত। চিকিৎসাও শুরু করা উচিত দ্রুত। রক্তের গ্লুকোজ মাপলে অনেক কম পাওয়া যাবে। আজকাল বাড়ীতেই রক্তের গ্লুকোজ মাপা যায়। ডায়াবেটিকদের গ্লুকোমিটার বাসাতে রাখা উচিত। তাহলে সহজেই দ্রুত ডায়াগনসিস করা যাবে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া ডায়াগনসিস করতে পারলে সাথে সাথে গ্লুকোজ বা চিনি জাতীয় খাবার দিতে হবে। চিনির বা গ্লুকোজের শরবৎ, মিষ্টি, ড্রিংকস্, ফলের রস, চকলেট ইত্যাদি দেয়া যায়। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে আবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করতে হবে। তখন যদি গ্লুকোজের মাত্রা কম থাকে আবার উপরোক্ত খাবার দিতে হবে। অতিদ্রুত রোগীকে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অনেক সময় বাসায় বা আশেপাশে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকেনা। তখন দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হবে। তবে নিয়ে যাবার আগে অবশ্যই মিষ্টি জাতীয় খাবার দেয়া উচিত। তীব্র হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসা কখনই বাসাতে করা যাবেনা।

তীব্র হাইপোগ্লাইসেমিয়ার রোগীকে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে। গ্লুকাগন ইনজেকশন মাংসে দিলে দ্রুত রক্তের গ্লূকোজ বেড়ে যায়। শিরায় গ্লুকোজ দিলে রোগী দ্রুত আরাম পায়। রোগী যদি অজ্ঞান থাকে তবে শিরায় গ্লুকোজ দিলে দ্রুত ভাল হয়ে উঠে।

ডায়াবেটিক রোগীদের যেকোন সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। তাই সবারই এ বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার। চিকিৎসকের উচিত ডায়াবেটিক রোগীদের বিষয়টি সময় নিয়ে ভালভাবে বুঝিয়ে দেয়া। রোগীর আত্মীয়স্বজনকেও বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের বাসায় গ্লুকোমিটার অবশ্যই রাখা উচিত। বাসার অন্যরাও এটির সঠিক ব্যাবহার জেনে রাখবেন। এখন গ্লুকোমিটারের দাম বেশী নয় এবং এর ব্যবহারও খুব সহজ

 

ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল

নিউরোমেডিসিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.