পৃথিবীতে কোমর ব্যথা যে কয়েকটি কারণে হয় তার মধ্যে স্লিপ ডিস্ক অন্যতম। এছাড়াও নানা কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। তবে স্লিপ ডিস্কে সুনির্দিষ্ট চরিত্র থাকে যা সায়াটিকা নামে পরিচিত। ব্যথা সায়াটিক নার্ভের এরিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে বলে সনাক্ত করা সহজ।

কোমর ব্যথা সাধারণত থাই এর পাশ বা পেছন দিয়ে পায়ের পাতা অথবা সামনে ছড়িয়ে যায়। কেন এ রোগ হয় তার সহজ ব্যাখ্যা হলো জেনেটিক দুর্বলতা তার সাথে পরিবেশের বিভিন্ন ট্রিগার ফ্যাক্টর। অনেকের জিজ্ঞাসা, ডিস্ক প্রলাপ্স বা ডিস্ক হার্নিয়া কি শুধু বিশ্রামেই ভালো করা সম্ভব? উত্তর হলো হ্যাঁ সম্ভব।

স্লিপ ডিস্ক রোগে হলমার্ক টেষ্ট হলো থ্রি টেসলা এমআর আই স্পাইন যা আসলে নিঁখুতভাবে বুঝিয়ে দেয় সমস্যাটি। ১.৫ টেসলা মেশিনে ঠিক ক্লিয়ার বোঝা যায় না। এ ছাড়া রেড ফ্লাগ সাইন আছে কিনা সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর এ রোগের চিকিৎসায়।

স্লিপ ডিস্ক ধীরে ধীরে হয়ে বাড়তে পারে কারণ ছাড়াই । আবার হঠাৎ কোন চাপের কারণে হতে পারে। যদি কারো রেডফ্লাগ সাইন থাকে তাহলে যত দ্রত সম্ভব সার্জারী করে নার্ভের চাঁপ কমিয়ে ফেলা উচিৎ নতুবা বিপদ হতে পারে।

রেড ফ্লাগ সাইন হলো মল মুত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা, হাঁটা চলা একদমই না করতে পারা, ব্যালান্স না থাকা, সেন্সরী ও মটর ফাংশন ক্রমশই খারাপের দিকে যাওয়া। এ লক্ষণের রোগী ছাড়া বাকি সব রোগী শুধু শুয়ে থেকেই ভালো করা সম্ভব। কোন রোগী যদি শুয়ে থাকা অবস্থায় সায়াটিকা লক্ষণ একদমই কমে যায় তাহলে আমি নিশ্চিত হই যে তিনি পুর্ন বিশ্রাম নিলে ভালো হবেন। বিশ্রাম সাধারনত সর্বনিম্ন দুসপ্তাহ, সর্বোচ্চ ১২ সপ্তাহ।

কেন ভালো হবেন তার সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা একটি উদাহরণ দিলে বুঝবেন, এই যে আমরা পড়ে গিয়ে চামড়ার নীচে যে রক্ত জমে ফুলে ওঠে তা কিন্তু ১৫ দিন বা একমাসের ভিতর ভালো হয়ে যায়, শরীর তা ফ্যাগোসাইটিক মেকানিজমে সারিয়ে তোলে, ডিস্কের সমস্যা ঠিক একই ভাবে শরীর সুস্থ করে তোলে। এসময় রোগী একটি রুমে থাকবেন, তাকে সহায়তা করতে ২৪ ঘন্টা একজন এলার্ট মানুষ লাগবে।একজন দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ লাগতে পারে প্রতি মুহুর্তে প্রথম দুসপ্তাহ। এসময় রোগী মোটামুটি শক্ত ও নরমের মাঝামাঝি একটি তোষকে শুয়ে থাকবেন।

আমাদের প্রধান টার্গেট হলো স্লিপ করা ডিস্ক যা এক্সিটিং এবং ট্রভার্সিং রুটে চাপ দিয়ে রেখেছে সে চাপ কমিয়ে রাখা।স্পাইন খাড়া হয়ে থাকলে নার্ভ চাপে থাকে শুয়ে থাকলে চাপ ছেড়ে দেয়। এক্ষেত্রে যে কাজ গুলো শুয়ে শুয়ে করতে হবে-

১. শুয়ে শুয়ে বেড প্যান অথবা ডায়াপারে মল মুত্র ত্যাগ করতে হবে। সহকারি তা পরিস্কার করবে।

২. শোয়া অবস্থায় গোসল করতে হবে। এক্ষেত্রেও সহকারি তাকে সাহায্য করবে।

৩. দাঁত ব্রাশ করবেন শোয়া অবস্থায়।

৪. খাওয়া – শুয়ে থাকা মানুষের সর্বনিম্ন ক্যালরী লাগে, এসময় অটোফেজি করে কিছু ওজন কমাতে পারলে ভালো। তবে ভিটামিন মিনারেল ইলেক্ট্রোলাইট ঘাটতি যেন না হয়।

৫. শুয়ে থাকা অবস্থায় শরীরের শিথিলতা এড়াতে মাংশ শক্ত রাখার ব্যয়াম করতে হবে।

৬. ধুমপান ডিজিনারেটিভ প্রসেস বাড়িয়ে দেয়, তাই বাদ দিতে হবে।

৭. বিষন্নতা ও ঘুমের চিকিৎসা নিতে হবে।

৮.মেডিটেশন ও নিজের সাথে কথা বলা প্রাকটিস করতে হবে।

৯. শুয়ে শুয়ে মোবাইল টেপাা, বই পড়া, টিভি দেখা সবই চলবে।

সাধারণত দুসপ্তাহ পর থেকে রোগী আরাম অনুভব করে বলে রোগী উঠে বসতে চায়, হাটতে চায়, তখনই নুতন ভিসিয়াস সাইকেল তৈরি হয়। মোদ্দা কথা আপনি যদি স্পাইনের উপর লম্ব চাপটি দীর্ঘদিন এড়াতে পারেন তবেই সম্ভব আপনাকে সুস্থ করা। এসময় পেলভিক ট্রাকশন – ১৫ মিনিট করে দিনে তিনবার নিতে পারলে আরো বেশি সহজ হয় রোগ থেকে মুক্ত হতে।

 

লেখক

ডা. নুরুল মোমিন খান

ইন্টারভেনশনাল পেইন ফিজিশিয়ান ও সার্জন

রেনোভা হাসপাতাল, ডেমরা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.