কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতা এ সময়ে বিরূপ পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় মানুষ জনপ্রিয় ক্যালরিসমৃদ্ধ কিন্তু অনিরাপদ খাবার বেশি খায়। শীত মৌসুমে বেশির ভাগ উৎসব-অনুষ্ঠান হয়। বেশির ভাগ খাবারই তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত ও উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ।

শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামে শৈথিল্য: শীত বাড়লে মানুষ ঘরে থাকে। ব্যায়াম ও হাঁটাচলা কমিয়ে দেয়া হয়। শারীরিক পরিশ্রম কমার কারণে পরিপাকতন্ত্র ধীরে চলে এবং রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। এতে খাবারে অজীর্ণ, দেহের বাড়তি ওজন, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে।

জীবাণু সংক্রমণ: শীতকালে নরোভাইরাস, রোটাভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রভৃতি জীবাণুর সংক্রমণ বেড়ে যায়। নরো ও রোটাভাইরাস সংক্রামক রোগ; দূষিত খাদ্য বা পানীয় গ্রহণে এই রোগ দেখা দেয়। নরোভাইরাস শীতকালে বেশি দেখা যায়। বমি, ডায়রিয়া এর প্রধান লক্ষণ। রোটাভাইরাস মূলত শিশুদের সংক্রমণ করে, মারাত্মক ডায়রিয়া হতে পারে। শিশু, বয়স্ক লোক ও যারা অন্যান্য রোগে ভুগছেন, তাদের দেহে জীবাণুর সংক্রমণ বেশি। ১০-১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রোটাভাইরাস লিভারকে সংক্রমণ করতে পারে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মূলত শ্বাসনালি সংক্রমিত করে। শীতকালে এদের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এই ভাইরাস পরিপাকতন্ত্রও সংক্রমণ করতে পারে। এতে ডায়রিয়া ও বমির লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়া স্ট্রিট ফুড বা জীবাণুযুক্ত খাবার বা অপরিষ্কার হাতে খাবার খাওয়ার ফলে পাকস্থলী বা ডিওডেনামে এইচ পাইলরি (ঐ ঢ়ুষড়ৎর) জীবাণুর সংক্রমণে পেপটিক আলসার হতে পারে। দূষিত খাবার বা পানীয় গ্রহণের ফলে লিভারে ভাইরাসজনিত প্রদাহ (হেপাটাইটিস) দেখা দিতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য: ঠাণ্ডা আবহাওয়া, কম শারীরিক পরিশ্রম এবং কম পানি পানে কারও কারও কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে। এছাড়া তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবারের কারণে বুকজ্বালা রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

কীভাবে সুস্থ থাকবেন: সুষম ও বিশুদ্ধ খাবার খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। খাদ্যতালিকায় তাজা ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, মাছ, কম চর্বিযুক্ত খাবার, দই প্রভৃতি রাখুন। তৈলাক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত শরীরচর্চা পরিপাকতন্ত্র ও লিভারকে সক্রিয় রাখে। ওজন কমাতে সাহায্য করে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, বিশেষ করে নিয়মিত হাত ধোয়া ও বাইরের খোলা বা যেকোনো অপরিচ্ছন্ন খাবার না খাওয়া।

প্রতিষেধক গ্রহণ: শিশুদের ইপিআইয়ের সময় অনুযায়ী সব টিকা এবং হেপাটাইটিস প্রতিরোধে বড়-ছোট সবাইকে হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘বি’ ভাইরাসের টিকা নেয়া উচিত। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও রোটাভাইরাস প্রতিরোধে শিশুদের টিকা দেয়া কর্তব্য।

 

অধ্যাপক ডা. বিমল চন্দ্র শীল

পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.