বয়স ও লিঙ্গভেদে হিমোগ্লোবিন যখন কাক্সিক্ষত মাত্রার নিচে অবস্থান করে, তখন আমরা একে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলি। হিমোগ্লোবিন শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেয় সঞ্জীবনী অক্সিজেন।

রক্তশূন্যতা হলে কী হয়

হিমোগ্লোবিন কমতে থাকলে ক্লান্তি দানা বাঁধে। শরীরে ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। স্বল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠে শরীর। হƒৎপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। হƒদস্পন্দন বেড়ে যায়। শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এমনকি তীব্র রক্তশূন্যতা হার্ট ফেইলিওর পর্যন্ত করতে পারে। তখন গায়ে-পায়ে পানি জমে যায়। শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট লাগে। রক্তশূন্যতার কারণে ঠোঁটের কোণে ক্ষত হয়, জিহ্বায় ঘা হয়। জিহ্বার গোড়ায় থাকা পাপিলা ক্ষয় হয়ে হতে পারে মাংসের মতো লালচে। চুলের ঝলমলে উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়, চুল ফেটে যায়, নখ ফেটে যায়। এর ফলে দেখা দিতে পারে স্নায়বিক দুর্বলতা। দীর্ঘস্থায়ী রক্তশূন্যতায় খাদ্যনালি ওপরের দিক চেপে যায়। ফলে ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, নারীদের মাসিক হয়ে পড়ে অনিয়মিত। লোহিত কণিকা ভেঙে রক্তশূন্যতা হলে জন্ডিস দেখা দেয়। সুতরাং রক্তশূন্যতার লক্ষণ কারণভেদে বিভিন্ন হতে পারে।

কেন রক্তশূন্যতা হয়

এটি হতে পারে আয়রনের অভাবে। এছাড়া লোহিত কণিকা ভেঙে গেলে এমনটি হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমনÑকিডনি কিংবা লিভার বিকল, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, ক্যানসার, যক্ষ্মাসহ নানা রোগে হতে পারে রক্তশূন্যতা। হিমোগ্লোবিনের নিজস্ব রোগ, যেমনÑথ্যালাসেমিয়াসহ অসংখ্য রোগে সৃষ্টি হতে পারে রক্তশূন্যতা। আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে রয়েছে অপুষ্টি, পেপটিক আলসার, বেদনানাশক ওষুধ ও স্টেরয়েডের ফলে পাকস্থলীর ক্ষত, কৃমির সংক্রমণ, পায়খানা কিংবা রজঃস্রাবের সময় রক্তক্ষরণ, ঘন ঘন গর্ভধারণ ইত্যাদি।

করণীয় : রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হলে প্রথমে পরখ করে নিতে হবে এর তীব্রতা কতটুকু। এর পেছনের কারণ খুঁজে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেহেতু আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, সে জন্য খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে লৌহসমৃদ্ধ খাবার। এছাড়া ভিটামিন বি-১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হলেও হতে পারে রক্তশূন্যতা। লাল মাংস, গিলা, কলিজা, ছোট মাছ, লালশাক, কচুশাক, সবুজ শাকসবজি আর ফলমূলের জোগান বাড়াতে হবে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায়। ক্ষেত্রবিশেষে ফলিক অ্যাসিড ভিটামিন খেতে হবে। কোনো কোনো রক্তশূন্যতায় আয়রন গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, সেটাও জানতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে।

 

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ,  বরিশাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.