রক্তশূন্যতা বা রক্তাস্বল্পতা, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় অ্যানিমিয়া, যেটি কিনা সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এমন একটি উপসর্গ।রক্তাস্বল্পতাকে অনেকেই একটি রোগ বলে বিবেচনা করেন, আদতে এটি একটি উপসর্গমাত্র, যার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে অতি সাধারণ রোগ থেকে মারাত্মক কোনো ব্যাধি। তাই অ্যানিমিয়াকে সবসময় অতি সাধারণ চোখে বিবেচনা করলে চলবে না।

আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের ধারণা রক্ত কমে গেছে, ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করলে বা আয়রনজাতীয় ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে অথবা রক্ত বেশি কমে গেলে নিজেরাই বা ডাক্তারের পরামর্শে এ রোগ নির্ধারণ করার আগেই শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে ফেলেন।

যদি রোগ নির্ধারণের আগেই রক্ত সঞ্চালন করে ফেলা হয়, তাহলে লুক্কায়িত রোগটি ধরতে গিয়ে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞরা বিপাকে পড়েন। কারণ তখন আর রোগীর রক্তের রিপোর্ট ঠিক আসে না। রোগ নির্ধারণ করতে অনেক দেরি হয়ে যায়।

নিচে বর্ণনা করছি সচরাচর যেসব কারণে রক্তশূন্যতা হয়।

১. আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া

রক্তে লোহার পরিমাণ কমে গেলে হয়।

যেসব কারণে লোহা কমে যেতে পারে তা হচ্ছে:

লোহা বা আয়রনযুক্ত খাবার দীর্ঘদিন কম খাওয়া

শরীর থেকে অল্প অল্প করে প্রতিদিন রক্তপাত হাওয়া (যেমন পাইলস + কৃমি সংক্রমণ), নারীদের অতিরিক্ত মাসিক

২. কম্বাইন্ড ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া

রক্তে লোহা এবং অন্যান্য ভিটামিন (বি-১২) ও মিনারেলের মাত্রা কমে যাওয়া।

৩. অ্যানিমিয়া ফর ক্রনিক ডিজিজ

কারো দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগ থাকলে যেমন:

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ

ডায়াবেটিস

থাইরয়েড হরমোন কম থাকা

যক্ষ্মা

অলিভ ক্যান্সার (পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র)

রক্তের ক্যান্সার (লিম্ফোমা, মাল্টিপল মায়োলমা, ক্রনিক লিউকেমিয়া, অ্যাকিউট লিউকেমিয়া ইত্যাদি)

অটো ইমিউন ডিজিজ (যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস/এসএলই)

৪. থ্যালাসেমিয়া

বাংলাদেশে খুবই কমন একটি রোগ। এটি যথাযথ সময়ে সঠিকভাবে ধরা এবং যাদের প্রয়োজন তাদের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা অতীব জরুরি।

৫. অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া

যাতে রক্তের লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা ও অণুচক্রিকা তিনটিই কমে যায়। এ রোগ অতি জরুরি ভিত্তিতে নির্ধারণ করা না গেলে রোগীকে বেশিদিন বাঁচানো সম্ভব হয় না

এছাড়া আছে বোনম্যারো ফেইলিউর সিনড্রোম, নিওন্যাটাল অ্যানিমিয়া, পিএনএইচ—এ রকম আরো অনেক রোগ যাতে রক্তশূন্যতা প্রধান উপসর্গ হিসেবে ধরা দেয়।

তাই রক্তশূন্যতা বা রক্তাল্পতা হলে অবশ্যই শরীরে রক্ত দেয়ার আগে একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন আসল রোগটি তাড়াতাড়ি নির্ণয়ের জন্য।

 

লেখক:

ডা. দিলশাদ জাহান

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.