আমাদের দেশে মেরুদণ্ডে যক্ষ্মা রোগ খুব কমন, যেটিকে ‘পটস ডিজিজ’ বলা হয়। রোগটি অনেক সময় মেরুদণ্ডে টিউমারের মতো উপসর্গ নিয়ে হাজির হতে পারে।

যক্ষ্মার কিছু চিরাচরিত লক্ষণ আছে। কারও জ্বর, অরুচি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা, নিউট্রিশনাল স্ট্যাটাস খারাপ থাকে কিংবা পরিবারে কারও যক্ষ্মার ইতিহাস থাকে, এগুলোকে যক্ষ্মার খুব কমন উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু মেরুদণ্ডে যক্ষ্মা হলে এসব উপসর্গ পাওয়া যায় না।

অনেক সময় দেখা যায়, এ ধরনের রোগীরা দুই পায়ে দুর্বলতা নিয়ে আসেন। এটি থোরাসিক রিজিওনে খুব কমন। দেখা যায়, দুই হাত ঠিক আছে কিন্তু দুই পা অবশ হয়ে যায়। অনেক সময় রোগী কোমরের ব্যথা নিয়েও আসেন। টিবির এই পটস ডিজিজে ব্যথাটা স্পাইনাল টিউমারের মতো নকচারনাল ব্যথা হয় না। তবে বেশিরভাগ রোগী আক্রান্ত হওয়ার অনেক পরে আসেন, এজন্য তাদের পা অবশ ও কোমরে ব্যথা থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে এলে একটি এক্স-রে করেই পটস ডিজিজ হয়েছে কি না বোঝা যায়।

মেরুদণ্ডের টিউমার ও পিএলআইডি চেনার উপায়

প্রথমত, আমরা ব্যথার ইতিহাস যাচাই করি। পিএলআইডি আক্রান্ত হলে তার কোমরের ব্যথা দুই পায়ের পেছন দিকে নেমে যায়। সাথে কফিং, স্নিজিং বা স্ট্রেইনিং যত করে ব্যথা তত ব্যথা বাড়তে থাকে। হাঁটা-চলা বা দৌড়াদৌড়ি করলেও ব্যথাটা বাড়তে থাকে। বিশ্রাম নিলে ব্যথা কম হয়।

মেরুদণ্ডে টিউমারের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো হয়। এর সাথে শারীরিক সক্রিয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। শারীরিক সক্রিয়তা বেশি হলেও স্পাইনাল টিউমারের ক্ষেত্রে ব্যথা বাড়ে না, অনেক ক্ষেত্রে কমেও যায়। তবে রাতে ব্যথাটা খুব বেড়ে যায়।

এসব ইতিহাস জেনেই মোটামুটি রোগীদের আলাদা করে দেয়া যায়। পর্যবেক্ষণ, উপসর্গ ও বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে কোন রোগে আক্রান্ত তা আমরা বুঝতে পারি।

সবাইকে বলব, যেকোনো রোগ নিয়েই আপনাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। অস্ত্রোপচারের পর যারা সুস্থ হচ্ছেন, তাদেরকে আমরা অন্যদের সচেতন করার বিষয়ে পরামর্শ দেই যেন সবাই রোগ হওয়ার শুরুতেই চিকিৎসকের শরণাপণ্ন হন।

মেরুদণ্ডের যত্নের কথা আমরা আগেও বলেছি। অনেকেই আছেন জিমে যান কিন্তু তিনি জানেন তার শরীরের জন্যে কোন ব্যায়াম প্রয়োজন। অনেকেই আছেন, ভাবেন আমি এক মাসে এত কেজি ওজন কমাব। এরাই আসলে পরে মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভোগেন। আমাদের দেশে অনেকে ইউটিউব দেখেই ব্যায়াম করা শুরু করেন। অথচ বাইরের দেশে প্রশিক্ষক বা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে পরে ব্যায়াম শুরু করেন। এটাই হওয়া উচিত।

 

লেখক

ডা. সৌমিত্র সরকার

সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
নিউরো সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.