অবহেলায় মানসিক রোগ যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা কেবল ভুক্তভোগী পরিবারই জানে।

কখনো কখনো পত্রিকায় দেখা যায় আপন মা কর্তৃক নিজ শিশু সন্তান হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কোথাও উল্লেখ থাকে মা নাকি মানসিক রোগী!

এ সব নিউজের পর অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, মানসিক রোগী হলে কি কখনো  আপন শিশু সন্তানকে নিজ হাতে মর্মান্তিক ভাবে হত্যা করা সম্ভব?

পিতা-মাতা কর্তৃক আপন শিশুহত্যাকে  মেডিকেলের ভাষায় বলে ফিলিসাইড (Filicide)।  ফিলিয়া (Filia) ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ সন্তান (ছেলে বা মেয়ে) আর সাইড (Cide) শব্দের অর্থ হত্যা করা। ফিলিসাইড হলো অর্থাৎ নিজ সন্তানকে হত্যা করাকে মানসিক রোগীর মধ্যে হঠাৎ ক্ষনিকের জন্যে তীব্র প্যারানয়েড ডিলিউসন ( Paranoid Delusion)  বা কমান্ডিং হ্যালুসিনেশন (Hallucination) কাজ করতে পারে।

ডিলিউসন (Delusion) কি? 

ডিলিউসন হল মিথ্যা বিশ্বাস। অর্থাৎ রোগী বিশ্বাস করেন, তার প্রিয় সন্তানের ভবিষ্যত ভাল হবে যদি তাকে তিনি এ মুহুর্তে মেরে ফেলেন। অথবা তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে পারেন তার সন্তান ভালো না। তাই তাকে মেরে ফেললেই ভালো।

হ্যালুসিনেশন (Hallucination) কি?

হ্যালুসিনেশন হলো অবাস্তব জিনিসপত্রের অস্তিত্ব। হয়তো আপনি গায়েবী কিছু দেখছেন, আর কেউ দেখেন না। গায়েবী আওয়াজ আপনার কানে আসে। কমান্ডিং হ্যালুসিনেশনের ফলে ফিলিসাইড হয়ে যায়। রোগী কানে গায়েবী আওয়াজ শুনতে পারেন, কেউ তাকে বলছে, “এ সন্তানকে তুমি মেরে ফেলো, তাতে তোমাদের দুজনের লাভ হবে”।

এ দুটো লক্ষণই ঘোরতর মানসিক রোগ স্কিজোফ্রেনিয়ায় পাওয়া যায়। অনেক সময় বাইপোলার মোড ডিসওর্ডাররো এ লক্ষন দুটি থাকে।

মানসিক রোগী কর্তৃক এ রকম ফিলিসাইড দুর্ঘটনা সাধারণত পরিবারের অজান্তেই হয়ে যায়। কেউই সেটা টের পান না।

মানসিক রোগ নিয়ে কেনো অবহেলা?

অনেক সময় মানুষ তার নিকটাত্মীয়ের মানসিক রোগকে অবহেলা করেন। অনেক সময় লজ্জায় গোপন রাখেন।

আবার কেউ কেউ অজ্ঞতায় মানসিক রোগ’কে ‘ভুত-প্রেত’ লাগা, ‘খারাপ বাতাসের স্পর্শ’, ‘যাদু-টোনা-বান’ ইত্যাদি মনে করেন।

এর জন্যে তারা অনেক সময় ‘ভন্ডপীর’, ‘ল্যাংটা পীর’, ‘বুড়া পীর’, ‘বাচ্চাপীর’, ‘মামু পীর’,… এসব হাস্যকর ভৌতিক নামধারী ‘দুষ্টু লোক’ বা ‘ভন্ড সাধক-কবিরাজ’ দের ‘ভুং-ভাং মন্ত্রের’ ফুঁ নেন। তাদের দেয়া ‘তেল পড়া’, ‘আটা পড়া’, ‘বাটি চালান’, ‘ঘটি চালান’ ব্যবহার করেন।

এসব কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসার পরিণতি কি?

অসচেতন মানুষজন চিকিৎসার সস্তা পদ্ধতি বা অজ্ঞতায় কিংবা দালালের খপ্পরে পরে এরকম কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসায় প্রতারণার শিকার হন, শারীরিক বা যৌন নিগ্রহের শিকার হন।

এসব কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসায় মানসিক রোগ ভাল-তো হয়ই না বরং ক্ষেত্র বিশেষে লক্ষণ চরম আকার ধারণ করে, ঘটে নানান দুর্ঘটনা। যা অনেক সময় পরিবারের জন্যে বয়ে আনে করুন পরিণতি।

ব্রেইনের রোগ- মানসিক রোগ নিয়ে ভয়ের কারণ নেই, লজ্জারও কারণ নেই। গবেষণায় উঠে এসছে বাংলাদেশের প্রতি ৫ সাধারণ মানুষের মধ্যে একজনের কোন না কোন রকম মানসিক রোগে রয়েছে।

মানসিক রোগকে অবহেলা করতে নেই, লজ্জা পেতে নেই। মানসিক রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে বেশী। সুতরাং আসুন মানসিক রোগ নিয়ে সচেতন হই।

 

লেখকঃ

ডা. সাঈদ এনাম

সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি)
সিলেট মেডিকেল কলেজ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.