মুখের মধ্যে যত রোগ হয়, মাড়ির রোগ তার মধ্যে অন্যতম, কিন্তু সাধারণ এ রোগটি অবহেলায় অপরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে, অনেকেই মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া নিয়ে উদাসীন। মাড়ি রোগের প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা যায় মুখের যত্নে অবহেলাকে।

মুখের যত্নে করণীয় :

সঠিক নিয়মে নিয়মিত দাঁতের সব পৃষ্ঠ পরিষ্কারের পাশাপাশি ফ্লস ব্যবহার, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে মাউথওয়াশ ব্যবহার। ব্রাশের পর আঙুল দিয়ে মাড়ি ম্যাসাজ মাড়িতে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। নরম, গোলাকার মাথা ও ধরতে সুবিধাজনক টুথ ব্রাশ ও ফ্লোরাইড যুক্ত টুথ পেস্টকেই সাধারণভাবে কার্যকর বলা যায়।

মিষ্টি জাতীয় খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যবান্ধব সুষম খাবার খাওয়া। মাড়ির সুস্থতার জন্য ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খুব জরুরি।

ছয় মাস পর পর অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

অন্যান্য ক্রোনিক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, ব্লাড প্রেশার, হাইপার গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিছু ওষুধ যেমন বিষণতা, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসারে ব্যবহৃত ওষুধ অনেক সময় মুখকে শুষ্ক করে বা মাড়িকে বাড়িয়ে মাড়িতে রোগের সৃষ্টি করে। হরমোনের তারতম্য বা গর্ভকালীন মাড়ি রোগ দেখা যায়। এরপরও যাদের মুখ শুষ্ক থাকে, এলোমেলো বা উঁচুনিচু  দাঁত, কিছু ওষুধের পাশর্^প্রতিক্রিয়া, লিভারের রোগ, ভিটামিন বা মিনারেলের স্বল্পতা, রক্ত স্বল্পতা, রক্তের রোগ ইত্যাদিতে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। কারণ যাই হোক, ব্রাশের সময় বা কিছু কামড়ের সময় বা থুতু ফেললে রক্ত দেখা গেলে অবহেলার সুযোগ নেই।

কারণ

দাঁতের ধারক কলা ক্ষতিগ্রস্ত : দাঁত নড়ে যাওয়া, চর্বণে ব্যথা, শিরশির অনুভূতি, মুখে দুর্গন্ধ,মুখ ফুলে যাওয়া ও চোয়ালের হাড়ক্ষয় থেকে পড়ে যাওয়া জন্য দীর্ঘমেয়াদি মাড়ি রোগ দায়ী। দাঁত হারানোর কারণ দীর্ঘমেয়াদি মাড়ি রোগ, দাঁত হারালে খাদ্যগ্রহণ থেকে শুরু করে ডিমেনশিয়া পর্যন্ত হতে পারে।

অন্যান্য রোগ তৈরির উৎস : মাড়ির সংক্রমণ সহজেই রক্তবাহিকাতে মিশে শরীরের যে কোনো স্থান যেমন- হার্টে ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস, এনজাইনা, মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমিয়ে স্ট্রোকের আশঙ্কা, গর্ভকালীন দাঁতের মাড়ি রোগ থেকে বড় ধরনের জটিলতা, অপরিণত বা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মের ঝুঁকি, ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া, হাড়ক্ষয়, ফুসফুসে জটিলতা, ক্রনিক কিডনির অসুখ, অগ্ন্যাশয়ের জটিলতাসহ ক্যানসারের সঙ্গেও মাড়ি রোগের যোগসূত্র রয়েছে।

চিকিৎসা

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরিষ্কার মুখ বা প্ল্যাক ও পাথর থেকে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার সূত্রপাত। তাই সহজ স্কেলিং নামক নিরাপদ চিকিৎসায় সমাধান মেলে, তবে অবহেলাতে বেশি দেরি হলে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে, দাঁতের ধারক কলা বেশি নষ্ট হলে গ্রাফটিংয়ে যেতে হতে পারে। শারীরিক অন্য কোনো কারণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে মুক্তি পাওয়া যায়।

 

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ

রাজ ডেন্টাল সেন্টার , কলাবাগান ঢাকা ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.