ফ্যাটি লিভারটা প্রথমত আমাদের পাক-ভারতে উপমহাদেশের মানুষের জেনেটিক একটা উপাদান। দ্বিতীয় কথা হল শারীরিক গঠন আর তৃতীয়ত আমাদের খাদ্যাভ্যাস।

এখন প্রথম বিষয় হলো- আমাদের দেশের মানুষের গঠন খুব বেশি লম্বাও না আবার খাটোও না। আমরা মধ্যম সাইজের। সঙ্গে আমাদের চর্বির পরিমাণটা বেশি থাকে। দ্বিতীয় বিষয় হলো- আমাদের খাদ্যাভ্যাস। প্রধানত ভাত আমাদের প্রধান খাবার। যখন আমরা ভাত বেশি খাচ্ছি, তখন দেখা যাচ্ছে যতটুকু খাওয়া দরকার সেভাবে খাচ্ছি না। এগুলো হলো প্রধানত ফ্যাটি লিভারের কারণ।

আমরা চিকিৎসকরা বিভিন্নভাবে জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি। এখানে আমাদের শারীরিক ফিটনেস ঠিক করার জন্য শরীর চর্চা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

আরেকটা বিষয় হলো এখানে ওষুধের ভূমিকাটা খুব বেশি নয়। কারণ, ওষুধের ওপর নির্ভর করে ফ্যাটি লিভার নির্মূল করতে পারবো না, যদি না খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন না করি।

খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও শরীর চর্চা

আমরা সব সময় বলি স্বাস্থ্যসমত খাবার খেতে হবে। স্বাস্থ্যসমত খাবার বলতে আমরা বুঝি খাদ্যের প্রধান ছয়টি উপাদান- শর্করা, আমিষ, স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। এই ছয়টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার হতে হবে।

এখনকার দিনে কোনো কোনো জায়গায় দেখা যায় কিটো ডায়েট নামের একটা শব্দ চালু হয়েছে। আমরা এই ধারণা সঙ্গে একমত নই। আমরা মনে করি, এটা স্বাস্থ্যকর ডায়েট নয়।

প্রথমত আমাদের বয়স, শরীরের ওজন এবং উচ্চতার সঙ্গে মিলিয়ে খাবার খেতে হবে। আমাদের যারা কায়িক শ্রম করেন, তারা অনেক পরিমাণে খাবার খেলেও সমস্যা হয় না বা শরীরে ওজন বাড়ে না। কারণ তারা পরিশ্রম করেন অনেক। কিন্তু আমাদের শহরের মানুষ খাচ্ছে কম তবুও শহরের ৬০ শতাংশ মানুষের মেদ বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ শহরের মানুষ কায়িক শ্রম করছে না।

আমাদের দেশে ৪০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন। প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। এতোগুলো মানুষ ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন। যারা ভুগছেন এদের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা।

এখানে আমাদের শরীর চর্চার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। দেখা যাচ্ছে, যে জায়গাগুলো আমরা হাঁটতে পারি, কিন্তু অনেক সময় আমরা না হেঁটে পরিবহন নিচ্ছি। অনেক সময় দেখা যায় খেতে বসে যতটা না প্রয়োজন, তার থেকে বেশি খেয়ে ফেলছি। খেয়েই শুয়ে পড়তেছি। এগুলোই মূল কারণ।

অনেকের চিন্তা করেন, আমার ফ্যাটি লিভার আছে, দু’চারটা ওষুধ খেলে ফ্যাটি লিভার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হচ্ছে না বা সম্ভব নয় এবং বৈজ্ঞানিকভাবেও এটা সত্য নয়। আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনই হলো সবচেয়ে আদর্শ বিষয়।

দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত থাকলে বিভিন্ন জটিল রোগের সম্ভাবনা আছে। এর মাধ্যমে লিভার ডিজিজ হতে পারে, লিভার সিরোসিস হতে পারে বা লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে। কাজেই এত বড় ঝুঁকি যেখানে আছে, সেখানে অবশ্যই আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে হবে।

এখানে ওষুধের চেয়ে জীবনযাত্রার পরিবর্তনটা বেশি জরুরি। কারণ ওষুধ একা একা কোনোভাবে কাজ করবে না। আমরা দিচ্ছি কিন্তু এখানে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওষুধটা ব্যবহার করতে হবে। আবারও বলছি শরীরের ওজন কমানো এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা।

প্রথমত আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে। তার বয়স, ডায়াবেটিস আছে কিনা, প্রেশার আছে কিনা- সবকিছু মাথায় রেখে তাকে চিকিৎসা করতে হবে। রোগীকে প্রতিনিয়ত ফলোআপে থাকতে হবে। শুধু একবার গেলাম, ওষুধ খেলাম- এটাই সমাধান না। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে, সেগুলো করতে হবে।

 

ডা. মো. মাসুদুর রহমান খান

সহযোগী অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.