প্রথম বাচ্চা নেওয়ার পর মাকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে সময়ের প্রয়োজন হয়। এজন্য অনেক দম্পতি দ্বিধায় থাকে যে, কখন দ্বিতীয় বাচ্চাটি নিতে হবে। কারণ, এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করলে মা এবং বাচ্চা উভয়ই স্বাস্থ্যঝঁকিতে পড়তে পারেন।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. দীনা লায়লা হোসেন বলেছেন, পরবর্তী বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মাকে তার শারীরিক বিষয়টির ব্যাপারে খেয়াল রাখা খুব জরুরি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রথম দিকে ‘দুটি সন্তানই যথেষ্ট’ এ রকম একটা স্লোগান ছিল। পরবর্তীতে আসলো- ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়।’ আমাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি কারণে এই ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়েছে।

ডা. দীনা লায়লা হোসেন বলেন, এরপরেও অনেক সময় একটার আরেকটা সঙ্গী চাই বা বাবা-মা চান আরেকটা বাচ্চা নিতে। এ সময় প্রশ্ন আসে একটা বাচ্চার কত দিন পরে আরেকটা বাচ্চা নেওয়া যাবে?

তিনি বলেন, এটার ব্যাপারে কয়েকটি গাইড লাইনের কথা বলা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে- তিন থেকে চার বছর আবার কোথাও বলা হয়েছে- তিন থেকে পাঁচ বছর। এছাড়াও কোথাও বলা হয়েছে আদর্শ হলো পাাঁচ বছর।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আমরা যখন বাবা-মায়েদের বলি- একটা বাচ্চা থেকে আরেকটা বাচ্চা নেওয়ার সময় হবে পাঁচ বছর। তখনই তারা বলেন, কেন আমাকে এত বেশি ব্যবধান রাখতে হবে?

তিনি বলেন, একটা বাচ্চা হওয়ার পরে একটা মা এই যে বাচ্চাটাকে তার শরীরের বড় করলো, ডেলিভরির যে কষ্ট সেটাও হয় মায়ের। গর্ভে থাকাকালীন সময় বাচ্চার সকল পুষ্টি কিন্তু মায়ের থেকে যায়। এখানেই কাজ শেষ হয়ে গেলো তা কিন্তু না। তার পরে আবার বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং (বুকের দুধ পান করানো) করাতে হয়।

ডা. দীনা লায়লা হোসেন বলেন, এখন পেটের ভেতর থেকে শুরু করে দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের অনেকটা ঘাটতি তৈরি হয়। কাজেই এই ঘাটতি থাকা অবস্থায় আমরাতো বলবো না আরেকটি বাচ্চা নিতে। কারণে যে বাচ্চা আছে, সে এখনো পুরোপুরি মায়ের ওপর নির্ভর। আর যখন প্রথম বাচ্চাটার দুই বছর পর ব্রেস্ট ফিডিং বন্ধ হলো, তখন মায়ের যে ঘাটতি হয়েছে সেটা পূরণ করার জন্য সময় দিতে হবে।

তিনি বলেন, কমপক্ষে ওই মাকে এক থেকে দুই বছর সেই ঘাটতি পূরণের জন্য সময় দিতে হবে। তার পরে আরেকটা বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করলে মা এবং বাচ্চার জন্য ভালো হয়।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রথম সন্তান জন্মের পরে ওপরে উল্লেখিত সময় ব্যবধান না রেখে দ্বিতীয় সন্তান নিলে যে সব সমস্যা হতে পারে-

এক. নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব।

দুই. বাচ্চা কম ওজনের হওয়া।

তিন. বাচ্চা আকারে ছোট হওয়া।

চার. মা এবং বাচ্চা দুজনই অপুষ্টিতে ভোগেন।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া মায়ের রক্তশূন্যতা হতে পারে। বাচ্চার প্রতি ভালোভাবে খেয়াল রাখতে পারবে না। ঘন ঘন ইফেকশন হবে। অনেক সময় রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া থেকে মায়ের হার্ট ফেইলিয়র হতে পারে। দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ।

 

ডা. দীনা লায়লা হোসেন

স্ত্রী রোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.