আমাদের গলায় থাইরয়েড গ্রন্থি রয়েছে। ছোটো একটি গ্রন্থি দেখতে অনেকটা মনে হবে দুটো পিরামিডকে একটা সরু ব্রিজ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে। গ্রন্থিটি গলার মধ্যভাগে অ্যাডামস অ্যাপলের ঠিক নিচে অবস্থিত।

থাইরয়েডগ্রন্থির ক্যান্সার সচারচার দেখা যায় না। যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে সাধারণত ১৫-২০ ও ৪০-৬৫ বছর বয়সীদের মাঝে বেশি দেখা দেয়। নারীদের মধ্যে বেশি হয়। নারী ও পুরুষের আক্রান্তের অনুপাত ২:১।

আক্রান্ত হবার কারণঃ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারণ জানা যায় না। তবে কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে।

১। গলগন্ডঃ

যাদের আয়োডিনের স্বল্পতার কারণে গলগন্ড রোগ রয়েছে তারা উচ্চ ঝুকিতে আছেন। উত্তর বঙ্গের মানুষের মধ্যে গলগন্ডের প্রবণতা অন্যান্য অঞ্চলের থেকে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।

২। ক্ষতিকর বিকিরণঃ

যদি গলায় ক্ষতিকর বিকিরণ পেয়ে থাকেন তা হলে ২০-২৫ বছর পর থাইরয়েড ক্যান্সার হতে পারে।

৩। পারিবারিক ইতিহাসঃ

অল্প কিছু ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এই ক্যান্সার হতে পারে।

৪। হাসিমোটা থাইরয়ডাইটিসঃ

এইটা থাইরয়েডের একটা প্রদাহের নাম। যাদের এ সমস্যা রয়েছে তাদের থাইরয়েড লিস্ফোমায় আক্রান্ত হবার ঝুকি ৬০-৮০ গুণ বেশি।

৫। নডিউল বা গোটাঃ

থাইরয়েড গ্রন্থিতে দীর্ঘমেয়াদী কোনো নডিউল বা গোটা থাকলে সেখান থেকেও থাইরয়েড ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।

উপসর্গসমূহঃ

১। গলা ফুলে যেতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির পাশাপাশি লসিকা গ্রন্থিও ফুলে যেতে পারে।

২। গলার স্বর ভেঙ্গে যাওয়াঃ থাইরয়েডের পাশে একটা স্নায়ু আছে যা আক্রান্ত হলে আবার কিছুক্ষেত্রে হরমোনাল ইমব্যালান্স হলে কন্ঠস্বর ভেঙ্গে যেতে পারে।

৩। গলায় ব্যাথা, ঘড়ঘড় আওয়াজ হওয়া, ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

৪। এছাড়া

মেরুদ্বন্ডের হাড়ে ছড়ালে: মেরুদ্বন্ডে ব্যথা, এমনকি হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে।

লিভারে ছড়ালে: ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, অরুচি দেখা দেয়।

ফুসফুসে ছড়ালে: শ্বাসকষ্ট, কাশি হতে পারে।

মাথায় ছড়ালে: তীব্র মাথা ব্যাথা, বমিভাব, বমি, খিচুনি হতে পারে, শরীরের একপাশ প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে।

চামড়ায় ছড়ালে: চামড়ায় গোটা বা ঘা হতে পারে।

ধরনসমূহঃ

সাধারণত ৪ ধরনের থাইরয়েড ক্যান্সার দেখা যায়।

এরমধ্যে-

১। প্যাপিলারী থাইরয়েড ক্যান্সার (৭৫-৮০%)

২। ফলিকুলার থাইরয়েড ক্যান্সার (১০-২০%)

৩। অ্যানাপ্লাস্টিক থাইরয়েড ক্যান্সার (৫%)

৪। মেডুলারি থাইরয়েড ক্যান্সার (৫%)

এছাড়াও থাইরয়েড লিস্ফোমা ও অন্যান্য অঙ্গের ক্যান্সার সেকেন্ডারী হিসাবে থাইরয়থডে ছড়াতে পারে, কিন্তু তা একেবারেই নগণ্য।

প্যাপিলারী ও ফলিকুলার থাইরয়েড ক্যান্সারকে একত্রে ডিফারেনসিয়েটেড থাইরয়েড ক্যান্সার বাল এবং এই ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য। সাধারণত অপারেশনের পর রেডিওআয়োডিন অ্যাবলেশন বা আয়োডিন থেরাপি দিয়েই এই ক্যান্সার ভালো হয়ে যায়, ছড়িয়ে পড়ার আগে চিকিৎসা নিলে।

সনাক্তকরণের প্রক্রিয়াঃ

প্রথমত উপসর্গ ও শারীরিক পরীক্ষার পর ডাক্তার প্রয়োজন মনে করলে নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করতে দিতে পারেন।

* Usg of Neck
* Usg guided FNAC
* Core Biopsy
* Radio Iodine updake test
* Thyroid Scan (Tc-99)
* CT Scan of Neck
* Whole body Bone Scan
* Chest X-ray

এছাড়া সাধারণ রক্ত পরীক্ষা

চিকিৎসাঃ

ধরন অনুযায়ী থাইরয়েড ক্যান্সারের চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

তবে সাধারণভাবে চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো হলো:

১। সার্জারী
২। রেডিও আয়োডিন থেরাপী
৩। রেডিওথেরাপী
৪। কেমোথেরাপী
৫। টার্গেটেড থেরাপী

থাইরয়েড ক্যান্সারগুলোর মধ্যে অধিকাংশই চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হওয়া সম্ভব। তবে কিছু ধরণ অত্যন্ত আঘাসী হয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় কঠিন ।

আমারা যদি ছড়িয়ে পড়ায় আগেই চিকিৎসা করতে পারি তাহলে সব থাইরয়েড ক্যান্সারেই ভালো ফলাফল হওয়া সম্ভব। এজন্য ভয় ঝেড়ে ফেলে সচেতনতা অতি জরুরী।

 

পরামর্শ দিয়েছেন-

ডা. মো. তৌছিফুর রহমান

টিউমার ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ

এমবিবিএস (শসোমেক), সিসিডি (বারডেম), এমডি (অনকোলজি)
সহকারী অধ্যাপক ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ, বগুড়া।
চেম্বারঃ ইবনে সিনা কনসালটেশন সেন্টার,কানজগাড়ী, বগুড়া।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.