ডায়াবেটিস একটি মেটাপলিক রোগ। ইনসুলিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যাবে। এজন্য পারিপার্শ্বিক ও বংশগত দুই কারণই থাকে। আমাদের উপমহাদেশে টাইপ-২ রোগীর সংখ্যা ৯৫ থেকে ৯৮ ভাগ। এ ধরনের ডায়াবেটিসে সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। বেড়ে গেলে বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে হাজির হয়।

ডাক্তার সাক্ষাৎকারে ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর উপসর্গ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান।

তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক পরিধি বেড়ে যাওয়ায় কায়িক পরিশ্রম কমে যাচ্ছে ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসছে। এখন আমরা শর্করা জতীয় খাবার বেশি খাচ্ছি, ফ্যাট জতীয় খাবার খেয়ে মুটিয়ে যাচ্ছি। এতে একদিকে ওজন বাড়ছে এমনকি শিশুরাও মুটিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদেরও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এখন থেকে ৫০ বছর আগে ডায়াবেটিসের গড় বয়স ছিল ৫০ বছর। এখন সেটি ৩০-৩৫ বছরের কাছাকাছি হচ্ছে। খুব অল্প বয়সে আমাদের জনশক্তি কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগের।

বর্তমানে বিশ্বে ৪০০ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ৮০ লাখের মতো। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, দুই বছর আগের একটি জরিপে দেখা গেছে, ডায়াবেটিস নাই বলে জানে এমন ১ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আশংকা করা হচ্ছে, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

উপসর্গ ও জটিলতা : ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায় ৫০ ভাগই উপসর্গহীন। তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে, বেশি বেশি প্রস্রাব হবে। পানির পিপাসা বেশি হবে বা খাবার রুচি বা পারিমাণ অনেক বেশি হলেও শরীর শুকিয়ে যাবে, শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিস হচ্ছে, যাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। শরীরে ইনসুলিন কম তৈরি হয়, শরীরে কোনো ঘা বা ফোড়া হলে শুকাতে অনেক সময় লাগে। কিছু আছে উপসর্গহীন ডায়াবেটিস, যাদের কিছু জটিলতা দেখে বুঝে নিতে হয়। রক্তের শিরায় পরিবর্তন, হার্টের বা ব্রেনের শিরায় পরিবর্তন হয়ে রক্ত চলাচলে বাধাগ্রস্ত করে এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে।

এছাড়া করোনারি আর্টিয়ারি সমস্যা সর্বোপরি হার্ট ফেইল হতে পারে। এ ছাড়া চোখের রক্তক্ষরণ হয়ে চোখে পানি পড়তে পারে। এটা অনেকেই চোখের ছানি মনে করে থাকে। কিন্তু আসলে এটি ছানি নয় ডায়াবেটিসের কারণে হয়ে থাকে।

ব্লাড সুগার কত হওয়া উচিত : এটা রোগীর ওপর নির্ভর করে রক্তে সুগারের পরিমাণ কেমন হবে। ডায়াবেটিসের টাইপ এবং রোগীর বয়সের ওপর নির্ভরশীল। যাদের কোনো ধরনের জটলতা নেই, তাদের খাবারের আগে ৬ থেকে ৭ এবং খাবারে পরে ৭ থেকে আট রাখতে হবে।

যাদের বয়স বেশি এবং শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা আছে, তাদের জন্য খাবারের আগে ৭ থেকে ৯ পর্যন্ত এবং খাওয়ার পরে ৮ থেকে ১০ হচ্ছে স্বাভাবিক এবং তিন মাসের গড়ে কম বয়সীদের ৭ এর নিচে নামাতে হবে। বয়স্ক ও যাদের বিভিন্ন ধরনের জটিলতা আছে তাদের ক্ষেত্রে ৯ পর্যন্ত থাকতে পারে।

শিশু বয়সে যাদের হাইপোগ্লাইসোমিয়া না থাকলে ৮ এর ভেতরে রাখাটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান।

 

ডা. মো. ফারুক

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.