গ্লুকোমা হলে চোখের অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্লুকোমা হওয়ার প্রধান কারণ হলো চোখের ভেতরে চাপ বেড়ে যাওয়া।

কাদের হয় : গ্লুকোমা যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। তবে বয়স্ক লোকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। গ্লুকোমা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা না পড়লে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা থাকে। গ্লুকোমার কারণে যদি একজন ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়, তাহলে পুনরুদ্ধার করা যায় না। তাই প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।

মানুষ তিন ধরনের  গ্লুকোমায় আক্রান্ত হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে ওপেন-অ্যাঙ্গেল (দীর্ঘস্থায়ী) গ্লুকোমা। এই ধরনের গ্লুকোমায় আক্রান্ত ব্যক্তির চোখে আস্তে আস্তে তরল নিষ্কাশন আটকে যায়।

দ্বিতীয় অ্যাঙ্গেল-ক্লোজার গ্লুকোমা। এর ফলে চোখের ভেতরে চাপ বৃদ্ধি পায়। কারণ সরু নিষ্কাশন কোণের কারণে চোখের তরল ঠিকভাবে সঞ্চালন করতে পারে না। ফলে সংকীর্ণ কোণে আকস্মিক চাপ বাড়ে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাকে বলা হয় একিউট অ্যাঙ্গেল ক্লোজার অ্যাটাক এটি হলো তৃতীয় ধাপ।

জন্মগত বা শৈশবেও কারও কারও গ্লুকোমা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় ড্রেনেজ সিস্টেমের ত্রুটির কারণে ট্র্যাবেকুলার সিস্টেম অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যা চোখের বা শরীরের কোনো রোগের কারণে ঘটতে পারে।

কারণ : গ্লুকোমা অপটিক স্নায়ুর ক্ষতির কারণে হয়, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। এই স্নায়ুর ক্ষতি সাধারণত চোখের ওপর চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশেষ করে চোখের অভ্যন্তরে প্রবাহিত তরল জমা হওয়ার ফলে চোখের চাপ বৃদ্ধি পায়। এতে চোখের লেন্স এবং কর্নিয়ার (চোখের রঙিন অংশ জুড়ে স্বচ্ছ স্তর) মধ্যবর্তী কোণে তরল জমা হতে শুরু করে।

ঝুঁকিতে কারা : পরিবারের কেউ গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়েছিল, চোখে কখনো আঘাত পেয়েছেন, চোখের ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচার হলে, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে, বার্ধক্য, অপটিক স্নায়ুতে রক্তপ্রবাহ হ্রাস পেলে, নির্দিষ্ট চোখের ড্রপের দীর্ঘদিন ব্যবহার হলে যেমন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ।

উপসর্গ : যদিও গ্লুকোমার প্রাথমিক লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তারপর কিছু লক্ষণ দেখে আপনি গ্লুকোমায় আক্রান্ত কিনা বুঝতে পারবেন। বমি বমি ভাব, চোখ, মাথা ও কপালে ব্যথা, আলোতে অসহিষ্ণুতা বোধ করা, চোখের পাতা জোর করে বন্ধ করা।

চিকিৎসা : গ্লুকোমা প্রথম অবস্থায় ধরা পড়লে রোগের অগ্রগতি রোধ করা যায়।

প্রতিকার : গ্লুকোমার পারিবারিক ইতিহাস চোখের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। কমপক্ষে ৪৫ মিনিটের জন্য নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন। গ্লুকোমা ধরা পড়লে, অস্ত্রোপচার এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে নির্ধারিত ওষুধ গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সচেতন থাকলে ভালো থাকবেন।

 

ডা. ইফতেখার মো. মুনির

ছানি ও গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ
চোখের সমস্যা ও চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করুন
বাংলাদেশ আই হসপিটাল মালিবাগ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.