দেশে মানব মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক। বর্তমানে স্ট্রোকজনিত মৃত্যু শুধু জাতীয় সমস্যা নয়; বিশ্বজনীন সমস্যা। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে।

মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহের বিঘ্নতার ফলে কোষের মৃত্যুজনিত কারণে স্ট্রোক হয়। ফলে মস্তিষ্কের কিছু অংশ্য ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

ইউনাইটেড হসপিটাল লিমিটেডের কনসালট্যান্ট, নিউরোলজিস্ট ডা. শাহপার নাহরীর বলেন, ‘হঠাৎ করে কারও যদি শরীরের কোনো অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাকে স্ট্রোক বলে। এটা এমন হতে পারে হঠাৎ কারও কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল বা তার মুখটা বেঁকে গেল।’

‘অথবা হঠাৎ করে মুখ ডান-বাম করতে পারছে না কিংবা তার শরীরের একটা অংশ কাজ করছে না। এরকম হলে আমরা তাকে স্ট্রোক হয়েছে বলে মনে করি। তবে এটা হঠাৎ করে হতে হবে’ যোগ করেন তিনি।

ডা. শাহপার নাহরীর বলেন, এ রোগটা সম্পর্কে সকলের জানা উচিত। এ রকম কারও দেখা দিলে, খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গেলে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসাটা করা সম্ভব।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, স্ট্রোক প্রধানত দু’ধরনের হয়ে থাকে।

এক. রক্তনালি ব্লক হয়ে গিয়ে রক্ত না যাওয়া এবং ওই অংশের শুকিয়ে যাওয়া। একে বলে ইস্কেমিক স্ট্রোক।

দুই. রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ। একে বলে হেমোরেজিক স্ট্রোক।

অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, স্ট্রোক বৃদ্ধ বয়সের অসুখ। তবে স্ট্রোক তরুণদের হবে না, সেটি নয়। বয়স্ক লোকদের বেশি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্ট্রোক হয়, যখন মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় বা বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে মস্তিষ্ক কাজ বন্ধ করে দেয়।

ইস্কেমিক স্ট্রোকের কারণ প্রসঙ্গে ডা. শাহপার নাহরীর বলেন, ইস্কেমিক স্ট্রোকের মূল কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। এই কারণের জন্যই রক্তক্ষরণ হয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে ইস্কেমিক স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তিনি বলেন, এছাড়া আরও অনেক কারণে ইস্কেমিক স্ট্রোক হতে পারে। যেমন- ডায়াবেটিস থাকলে, মাদক সেবন করলে, যাদের ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হয় বা কারও হার্টে যদি কোনো সমস্যা থাকে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এর বাইরে কারো যদি গলার মধ্যে কোনো আঘাত হয়, যেখানে রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে ইস্কেমিক স্ট্রোক হতে পারে। আর কারও যদি ক্যানসার থাকে, তাহলে তাদের রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকে, সেখান থেকেও ইস্কেমিক স্ট্রোক হতে পারে।

হেমোরেজিক স্ট্রোকের কারণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হেমোরেজিক স্ট্রোক রোগের ঝুঁকির কারণসমূহ মধ্যে- স্থূলতা, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব, অবৈধ ওষুধ ব্যবহার করা, উচ্চ কোলেস্টেরল, ঘুম না হওয়া, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে।

তিনি বলেন, এছাড়া পারিবারিক ইতিহাসের কারণেও হতে পারে। এটা সাধারণত জন্মগত সমস্যার কারণে হয়। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন হৃদরোগী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী, উচ্চরক্তচাপের রোগী ও ধূমপায়ীরা। এই চারটি বিষয় যার আছে, তার স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।

 

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু

মেডিকেল অফিসার, ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.