অ্যালার্জির কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। শরীরের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশনের কারণে কিছু খাবার গ্রহণের পর মুখ, জিহ্বা এবং মাড়ি চুলকাতে থাকে। যদি চুলকানির পরিমাণ অল্প হয় এবং শুধুমাত্র মুখে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে এটিকে আমরা ওরাল অ্যালার্জি সিনড্রোম হিসাবে প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় করি। তবে রোগীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে হঠাৎ করে জিহ্বা ফুলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যালার্জিজনিত কারণ হলে দেরি না করে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ফোলাযুক্ত জিহ্বা ডাউন সিনড্রোম, সংক্রমণ, জেনেটিক অচলাবস্থা, জিহ্বার ক্যান্সার, এনিমিয়া এবং লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে। জিহ্বার টেস্ট বাডগুলোর প্রদাহের অন্যতম কারণ অসাবধানতাবশত জিহ্বার উপর কামড়। যেসব খাবার এসিডিক, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত অথবা লবণাক্ত সেসব খাবারও জিহ্বায় টেস্ট বাডগুলোর প্রদাহ সৃষ্টি করে ফোলাভাব এনে দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে জিহ্বায় ফোলাভাব থাকলে তা এক্রোমেগালি, সারকোমা, ওরাল ক্যান্সার অথবা ডাউন সিনড্রোমের কারণে হতে পারে। যখন জিহ্বা ফুলে যায় তখন জিহ্বার প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং মাঝে মাঝে জিহ্বার স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তন হয়ে থাকে। এর কারণে জিহ্বা খুব মসৃণ দেখা যেতে পারে।

যখন আমাদের শরীর যথাযথ কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি১২ শোষণ করতে পারে না তখন পারনিসাজ রক্তস্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। এ ধরনের রক্তস্বল্পতায় জিহ্বার প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।

যদি কারো টুথপেস্টের প্রতি অ্যালার্জি থাকে তাহলে জিহ্বার প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। টুথপেস্ট ছাড়া মাউথওয়াশ, কৃত্রিম দাঁত ও কিছু ওষুধের কারণে অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশনে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে।

জগ্রেনস্ সিনড্রোমে লালাগ্রন্থিগুলো ক্ষতিগস্ত হয়। এর ফলে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়ে থাকে যার কারণে জিহ্বার প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। জিহ্বার প্রদাহ বা জ্বালাপোড়ার কারণে রোগী সবধরনের খাবার গ্রহণ করতে পারে না, আবার খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে না পারার কারণে ঠিকভাবে খেতেও চায় না ফলে রোগী শারীরিকভাবে দুর্বল এবং মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হতে পারে। পরিশেষে জিহ্বার ফোলাভাব বা জ্বালাপোড়া যাই থাকুক না কেন দ্রুত যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অনুমানের উপর ভিত্তি করে ভিটামিন সেবন অথবা মলম প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখবেন ভুল চিকিৎসার কারণে কখনো কখনো জিহ্বার কোনো রোগ সারাতে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। অতএব, জিহ্বার রোগে কোনো প্রকার অবহেলা করবেন না।

 

ডা. মো. ফারুক হোসেন

মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.