হৃৎপিন্ড বৈকল্য বা হার্ট ফেইলিওর হওয়া মানে আপনার হৃদযন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে না। হৃৎপিন্ডের মূল কাজ হলো সারা শরীরে রক্ত পাম্প বা সঞ্চালন করা। প্রতিমুহূর্তে অঙ্গটি শরীরে জালের মতো বিস্তৃত রক্তনালিতে রক্ত সরবরাহ করে থাকে। এই সরবরাহ ক্ষমতা কোনো কারণে কমে গেলে হার্ট ফেইলিওর হয়। এটি সাধারণত দুই রকম হঠাৎ করে, কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে হৃৎপিন্ডে বৈকল্য দেখা গেলে বা হৃৎপিন্ডের সঞ্চালন ক্ষমতা কমে গেলে তাকে বলে অ্যাকিউট বা আকস্মিক হার্ট ফেইলিওর। এ সময়েরোগীর হঠাৎ খুব শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন বা কয়েক মাস বা বছরব্যাপী ঘটে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি হার্ট ফেইলিওর।

হৃৎপি- বৈকল্যের কারণ : বেশির ভাগ হৃদরোগই নীরব ঘাতক। কোনো উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে এসব রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে। আকস্মিক বা দীর্ঘমেয়াদি হার্ট ফেইলিওরের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

হার্ট অ্যাটাক : হার্ট ফেইলিওরের প্রধান কারণ হলো এই হার্ট অ্যাটাক। হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা সময়মতো ও যথাযথ না হলে কিংবা হার্ট অ্যাটাকের পর নিয়মিত ওষুধ না খেলে, নিয়মকানুন না মানলে পরবর্তী সময়ে হার্ট ফেইলিওর হওয়া, মানে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ : উচ্চ রক্তচাপ হার্ট ফেইলিওরের আরএকটি কারণ।

জন্মগত হৃদরোগ : জন্মগত হৃদ্রোগের ত্রুটি মারাত্মক হলে ও সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।

হার্টের ভালভের অসুখ : হার্ট ভালভের অসুখ (জন্মগত, বয়সকালীন কিংবা বাতজ¦রজনিত) হার্ট ফেইলিওরের কারণ।

অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন : খুব দ্রুত ও অনিয়মিত হৃদস্পন্দনজনিত হার্ট ফেইলিওরের জন্য দায়ী।

রক্তশূন্যতা : রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্র হলে হার্ট ফেইলিওর হয়। হৃৎপিন্ডের প্রদাহ : হৃৎপিন্ডের প্রদাহই হার্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

হার্টের মাংসপেশির অসুখ : হৃৎপিন্ডের মাংসপেশির অসুখকে বলে কার্ডিওমায়োপ্যাথি। কার্ডিওমায়োপ্যাথির পেছনে বংশগতির প্রভাব থাকে। ডায়াবেটিস, স্থূলতা, থাইরয়েড ও হরমোনজনিত রোগের কারণে হতে পারে কার্ডিওমায়োপ্যাথি।

চিকিৎসা : অ্যাকিউট ও ক্রনিক হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন। অ্যাকিউট হার্ট ফেইলিওরের রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। ক্রনিক হার্ট ফেইলিওরের রোগীকে বাড়িতে রেখেই হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ দেওয়া হয়। হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো সারা জীবন ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। ওষুধের পাশাপাশি হৃৎপিন্ডের কার্যক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত রোগীর হার্টে সিআরটি নামের যন্ত্র বসানো হয়। এটি ব্যাটারিচালিত একটি ছোট যন্ত্র, যা বুকের উপরিভাগে চামড়ার নিচে স্থাপন করা হয় এবং বিশেষ তারের মাধ্যমে যন্ত্রটিকে হৃৎপি-ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। হার্ট ফেইলিওর রোগীদের সব ধরনের চিকিৎসা এখন দেশেই হয়।

 

ডা. শরদিন্দু শেখর রায়

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.