থাইরয়েডের রোগব্যাধির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকেন হাইপো থাইরয়েডিজমে। এতে সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি আক্রান্ত হন। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে যখন হরমোন নিঃসরণ কমে যায় তখন এমন ঘটনা ঘটে। আমাদের গলার সামনের দিকে কণ্ঠনালির ঠিক নিচে থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান। সেখান থেকে নিঃসরণ হয় শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাণরস বা হরমোন।

এই রোগ হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, ওজন বাড়তে থাকে, শীত সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায়, ক্লান্তি-অবসাদ এসে ভর করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, মাথার চুল ঔজ্জ্বল্য হারাতে থাকে, ঝরতে থাকে চুল, মাসিক হয়ে পড়ে অনিয়মিত, কখনো নেমে আসে বন্ধ্যত্ব।

এ রোগের চিকিৎসা না নিলে পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এই হরমোনের ঘাটতিজনিত কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এই হরমোনের অভাবে হৃদস্পন্দন কমে যায়। রক্তচাপ বেড়ে যায়। রক্তে শত্রু কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। হৃদপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এটাকে বলা হয় কার্ডিও মায়োপ্যাথি। এ থেকে হৃৎপি- বিকল পর্যন্ত হতে পারে। হাইপো থাইরয়েডিজমের কারণে হতে পারে রক্তশূন্যতা। আয়রনের অভাবে যে ধরনের রক্তশূন্যতা হয় সেগুলো থেকে এ রোগের রক্তশূন্যতা ভিন্ন ধরনের। এতে রক্তের লোহিত রক্তকণিকার আয়তন বেড়ে যায়।

এ রোগ থেকে হতে পারে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের বৈকল্য। পা ঝিনঝিন ভাব, জ¦ালাপোড়া, সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া স্নায়ু বৈকল্যের অন্যতম লক্ষণ। এ রোগে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। বুদ্ধিদীপ্ততা কমতে থাকে। হতাশা দানা বাঁধে। হাইপো থাইরয়েডিজম থেকে বন্ধ্যত্ব হতে পারে। বার বার গর্ভপাতের পেছনে দায়ী হতে পারে হরমোনের ঘাটতি। অকালীন প্রসব, প্রি-একলামশিয়া, জন্মগত ত্রুটি হতে পারে হাইপো থাইরয়েডের কারণে। হাইপো থাইরয়েডিজম আক্রান্ত মায়েদের সন্তান বুদ্ধি বৈকল্যের শিকার হতে পারে। এমনকি জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হতে পারে শিশু। তখন শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পেট ফুলে যায়। জিহ্বা বড় হয়ে যায়। মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

এই রোগে গলগ- হতে পারে। তখন থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায়। কণ্ঠ হতে পারে ফ্যাস ফ্যাসে। ক্ষেত্র বিশেষে ঢোক গিলতে ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। এ রোগের সবচেয়ে ভয়ানক অবস্থা হলো মিক্সিডিমা নামের জটিলতা। এতে মুখ, চোখের নিচের অংশ, জিহবা, পায়ের হাতের চামড়া ফুলে যায়। শরীরের তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে যায়। রক্তে অক্সিজেন কমে যায়। লবণ ঘাটতি দেওয়া দেয়। মানসিক ভারসাম্যতা নষ্ট হয়ে যায়। স্মৃতিভ্রম ঘটে, শরীরের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়, খিঁচুনি দেখা দেয়, রোগী হয়ে পড়ে অচেতন। যথাযথ চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু এসে কড়া নাড়ে দুয়ারে।

হাইপো থাইরয়েডিজমের চিকিৎসা নিলে এসব জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা সারা জীবনব্যাপী নিতে হয়। তবে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থাইরয়েডের মাত্রা জেনে ওষুধের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হয়।

 

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.