মেয়েদের জীবদ্দশায় বিশেষ পাঁচটি সময়ে শরীরের স্বাভাবিক হরমোন বা গ্রন্থিরসের তারতম্যের জন্য মুখগহ্বরে নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

পর্যায়-১ : বয়ঃসন্ধিকাল

ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনে অধিকতর কারণে মাড়িতে রক্ত প্রবাহ বেশি থাকে, ফলে সামান্য কিছুতেই মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, মাড়ি ফুলে যেতে পারে, মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে, ডেন্টাল ক্যারিজের প্রবণতাও বাড়তে পারে।

পর্যায়-২ : মেনস্ট্রয়েশন সময়কাল

মাসের বিশেষ দিনগুলোতে রক্তে প্রোজেস্টেরন হরমোনের আধিক্যের জন্য মাড়ি উজ্জ্বল দেখায় ও ফুলে যায়, মাড়িতে এপথাস আলসারসহ কিছু ঘা বা ক্ষত হতে পারে, লালাগ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাসিকের ২ থেকে ৩ দিন আগে এমন উপসর্গগুলো শুরু হলেও এগুলো ক্ষণস্থায়ী হয়।

পর্যায়-৩ : জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ সেবনকাল

প্রোজেস্টেরন সম্পর্কীয় ওষুধে মাড়িতে নানা ধরনের প্রদাহ দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে ওষুধ গ্রহণের প্রথম কয়েক মাস। ইস্ট্রোজেন সম্পর্কীয় ওষুধ শরীরে প্রাকৃতিক ইস্ট্রোজেন কমিয়ে কৃত্রিম ইস্ট্রোজেন বাড়িয়ে দেয়, ফলে মুখের একমাত্র নড়াচড়াক্ষম জয়েন্ট, টেম্পেরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টে নানা সমস্যার কারণে মুখ খুলতে, খাবার চর্বণে এমনকি মুখ নাড়াচাড়া করতে কষ্ট হতে পারে।

পর্যায়-৪ : গর্ভকাল

গর্ভাবস্থায় হরমোনের ব্যাপক তারতম্য ঘটে। বিশেষ করে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে মুখের মধ্যকার জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে, গর্ভাবস্থার ২ থেকে ৮ মাসের মধ্যে দাঁতে গর্ত, দাঁত শিন শিন করা, মাড়ি ফুলে গিয়ে রক্ত পড়া বা প্রেগনেন্সি ইপিউলিস খুব সাধারণ। মুখ পরিষ্কারে অনিহা বা বমি বমি ভাবের জন্য মুখগহ্বর রোগের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে। এ সময়টিতে অধিক সচেতন থাকতে হবে।

পর্যায়-৫ : মেনোপজকাল

বয়স্কদের মেনোপজে মুখে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা খুব সাধারণ। এর সঙ্গে যোগ হয় অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণে কোনো সেবনকৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সাধারণ মুখের স্বাদ কমে যাওয়া, মুখে জ্বালাপোড়া করা, একটুতেই ঝাল অনুভূতি, ঠাণ্ডা বা গরম খাবারে অতিসংবেদনশীলতা, মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা পরিবর্তন স্পষ্ট হয়। এ সময়ে ক্যারিজ বা দাঁত ক্ষয়, মাড়ি রোগ, চোয়ালের হাড় ক্ষয় থেকে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে।

করণীয়

* প্রত্যেকদিন নিয়ম মেনে সকালে নাস্তার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে নরম টুথ ব্রাশ ও ফ্লোরাইডযুক্ত উন্নতমানের টুথপেস্ট দিয়ে নিয়ম মেনে ২ মিনিট মুখ পরিষ্কার, বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে জীবাণু ধ্বংসকারক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার।

* দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থানে সঠিক পদ্ধতিতে ডেন্টাল ফ্লস বা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার রাখা, টুথ পিক বা কোনো ধাতব কাঠিকে শক্তভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়।

* ছয় মাস পরপর অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের পরিমর্শ নেয়া, বিগত কয়েকমাস কোভিডকালে যৌক্তিক কারণে ডেন্টাল রোগীদের ঘরে বসে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে কষ্ট লাঘবে প্রচেষ্টার কথা বলা হলেও বর্তমান নিউ নরমাল সময়ে অনেক ডেন্টাল ক্লিনিক সাধ্যমতো করোনা রোধের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে রোগী দেখা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডেন্টাল ক্লিনিকে না যাওয়াই ভালো আর প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই বিশ্বস্ত ডেন্টাল চিকিৎসকের সঙ্গে টেলিফোনের মাধ্যমে সময় ও তারিখ চূড়ান্তের পাশাপাশি কীভাবে নিজেকে বিপদমুক্ত রেখে ক্লিনিকে আসবেন সেটার ধারণা নিয়ে আসতে হবে। কোভিডের সামান্য কোনো উপসর্গ, সম্ভাবনা বা ইতিহাস থাকলে সেটা স্পষ্ট করতে হবে। কারণ প্রতিটি রোগীর জন্য ক্লিনিকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়।

* স্বাস্থ্যবান্ধব খাবার গ্রহণ ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খাওয়া।

* গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে মুখ পরিষ্কার রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা।

* বিশেষ প্রয়োজনে মেনপোজে গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শে হরমোন থেরাপি।

* শরীরের অন্যান্য রোগকে নিয়ন্ত্রণ ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা।

* প্রতিদিন সময় করে হাঁটা বা ব্যায়ামের অভ্যাস করা।

লেখক :

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ 

রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, সদস্য সচিব, বিএফডিএস

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.