দাঁত নিয়ে সমস্যায় পড়েননি, এমন মানুষ খুব কম। দাঁতের একবার সমস্যা দেখা দিলে তা থেকে বাঁচা কষ্টসাধ্য। ধরে নেওয়া যাক, নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষা করানো হয় না। এমনকি দাঁতের কোনো সমস্যাও নেই। তবে এই শীতে হঠাৎ করেই দাঁতের সমস্যায় ভুগতে শুরু করলেন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

১. দাঁত মাজার ক্ষেত্রে শক্ত ব্রাশের পরিবর্তে নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন।

২. দাঁতের দাগ দূর করতে পারে এরকম টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন না। পাশাপাশি দাগ তোলার জন্য বিভিন্ন উপাদান, যেমন: অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড বা ক্যালসিয়াম পাইরোফসফেট আছে এরকম টুথপেস্টও ব্যবহার করবেন না।

৩. মোড়কে উপাদানের নামের তালিকা দেখে টুথপেস্ট কিনুন।

৪. সংবেদনশীল দাঁতের জন্য তৈরি বিশেষ টুথপেস্ট বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

৫. দাঁত জোরে মাজার দরকার নেই। সাধারণভাবে হালকাভাবে ঘষেই দাঁত পরিষ্কার করুন।

৬. টুথব্রাশ উপরে-নিচে করে ঘষে দাঁত মাজুন। পাশাপাশি প্রতিটা দাঁত আলাদাভাবে মাজার চেষ্টা করুন। এর ফলে দাঁত ও মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

৭. অনেকের মাড়ি খোঁচানোর অভ্যাস থাকে। এ রকম অভ্যাস ত্যাগ করুন। পাশাপাশি রাতে ঘুমানোর সময় ‘মাউথগার্ড’ ব্যবহার করুন।

৮. দাঁতের সংবেদনশীলতা বাড়ায় এমন খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন: ভিনেগারে চুবানো খাবার, ফল, জুস, আইসক্রিম ও কোমল পানীয়।

৯. ঠান্ডা বাতাস মুখে লাগলেই যদি দাঁতের সমস্যা শুরু হয়, তবে মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক, মাফলার বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন।

১০. এতো কিছুর পরও সমস্যার সমাধান না হলে, ধরে নিতেই হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময় হয়ে গেছে।

অনেকেই অভিযোগ করেন, মিষ্টি খেতে পারেন না, টক খেতে পারেন না। ডাক্তারি ভাষায় রোগটিকে বলা হয় ‘হাইপারেমিয়া’। এ অবস্থায় দাঁতে ফিলিং করলেই ঠিক হয়ে যায়। যদি এ অবস্থাতেও চিকিৎসা করা না হয়, তবে অ্যাকিউট পাল্পাইটিসের দিকে যায়। এ অবস্থায় ঠান্ডা বা গরম পানি খেলে তীব্র ব্যথার অনুভূতি হয়। যদি এই ব্যথা ত্রিশ সেকেন্ডের বেশি থাকে, তবে রুট ক্যানাল চিকিৎসার প্রয়োজন। সাধারণত অ্যকিউট পাল্পাইটিস হলে রাতের দিকে অসহ্য ব্যথা হয়।

এ অবস্থাতেও যদি চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে দাঁত পাল্পে আক্রান্ত হয়। এতে ক্রনিক পাল্পাইটিস হয়। এমনটি হলে সাধারণত ব্যথা তীব্র হয় না। যদিও বা ব্যথা হয়, তাহলে অনেক সময় ঠান্ডা পানিতে ব্যথা না বেড়ে বরং কমে যায়। তাই বলা যায়, শীতকালে যদি কারও দাঁতের ব্যথা কমে যায় বা আগে থেকে থাকা ব্যথার অনুভূতি সেরে যায়, তবে বুঝতে হবে ক্রনিক পাল্পাইটিস হয়েছে। এ রোগের চিকিৎসাতেও রুট ক্যানাল করতে হয় বা দাঁত ফেলে দিতে হয়।

 

লেখক:

ডা. পূজা সাহা

সিকদার ডেন্টাল কেয়ার, মিরপুর,ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.