বর্তমান সময়ে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। শুধু ওষুধের ওপর নির্ভর করে এসব অসংক্রামক রোগকে দমিয়ে রাখা যায় না। এ ধরনের রোগ থেকে প্রতিকার পেতে সবার আগে জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।

লাইফস্টাইলের একটি অন্যতম অংশ ঘুম। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার, যা হতে হবে রাতের আঁধারে, কখনোই দিনের আলোয় নয়। যখন রাত নেমে আসে, তখন শরীরের হরমোন নিঃসরণে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। রাতে না ঘুমালে এসব হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

মেলাটোনিন হরমোন: মেলাটোনিন আমাদের ঘুমের চক্র ঠিক রাখে। দিনের আলোয় মেলাটোনিন নিঃসরণ হয় না বললেই চলে। মেলাটোনিন রাতে নিঃসৃত হয়, যার ফলে আমরা ঘুমাতে পারি। মেলাটোনিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। মেলাটোনিনের পরিমাণ বাড়লে কর্টিসোল কমে আসে।

গ্রোথ হরমোন: শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধির জন্য এ হরমোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রোথ হরমোন রাতের প্রথম প্রহরে ঘুমন্ত অবস্থায় সবচেয়ে বেশি নিঃসৃত হয়। তাই বাড়ন্ত শিশুদের রাতের ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

থাইরয়েড হরমোন: শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক থাইরয়েড হরমোন। শুধু শিশুদের নয়, সবার জন্য এ হরমোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ, অনিয়মিত পিরিয়ড, ত্বকের সমস্যাসহ অনেক কিছু। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতার একটি অন্যতম কারণ রাতে না ঘুমানো।

কর্টিসোল হরমোন: কর্টিসোল হরমোন আমাদের গ্লুকোজের পরিপাকে সহায়তা করে। ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি করে, সকালে ঘুম থেকে উঠতে সহায়তা করে। অ্যাড্রেনাল নামক গ্রন্থি থেকে কর্টিসোল হরমোন নিঃসরণ হয়। একে স্ট্রেস হরমোনও বলা হয়। রাতে ঘুম কম হলে কর্টিসোল হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হয়। এতে ডায়াবেটিস, হƒদরোগ ও পরিপাকতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগের জš§ নেয়।

ইনসুলিন: আমাদের খুব পরিচিত হরমোন ইনসুলিন। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে ভোরে স্ট্রেস হরমোন বেশি নিঃসৃত হওয়ায় সুগার বেড়ে যায়। বাড়ে ইনসুলিন অকার্যকারিতা।

অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন: অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোনও রাতেই নিঃসৃত হয়। ফলে আমাদের রাতে প্রস্রাবের জন্য ঘুম ভেঙে উঠতে হয় না। এ শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতি আমাদের খুব ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। রাতের ভালো ঘুম অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে। এ হরমোনের নিঃসরণ আপনার খাদ্যাভ্যাসের ওপরও অনেকটা নির্ভরশীল।

এ ছাড়া আরও অনেক হরমোন আছে, যেগুলো রাতের ঘুমের মধ্যে বেশি নিঃসরিত হয়। যেমন প্রোল্যাক্টিন, অক্সিটোনিন। এগুলোকে ভালোবাসার হরমোন বলা হয়। ফলে আমরা একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকি। এ ছাড়া টেস্টোস্টেরন, প্রোজেস্টেরন হরমোনের যথাযথ ছন্দ বজায় রাখতেও রাতের ঘুমের গুরুত্ব অনেক।

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে কমপক্ষে প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। শিশুদের জন্য সময়টা আরও বেশি। ঘুম হতে হবে রাতের অন্ধকারে। আমাদের শরীরের একটি হরমোনের কর্মকাণ্ড আরেকটি হরমোন দিয়ে প্রভাবিত হয়। এর একটি ছন্দ আছে। তাই যেকোনো একটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে এর প্রভাবে অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে।

 

মো. ইকবাল হোসেন

জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল ।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.