রাগ মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। এটি কিন্তু তা না হয়ে যদি, ছাইচাপা আগুনে সিদ্ধ হতে হয়, চিৎকার চেঁচামেচি ও শোরগোলের মধ্য দিয়ে রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তবে তা বিভিন্নভাবে অনেকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সামলাতে পারলে ভাল। রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন: –

কেউ রাগান্বিত হয়ে গেলে, যাবতীয় ক্ষতির কথা ভেবে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও নিজ থেকে আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে পারলে সবচেয়ে ভাল। অন্ততঃ রাগের তীব্রতা কমাতে পারলেও শারীরিক ও পারিপার্শ্বিক জটিলতা অনেকটা এড়ানো যায়। রাগের মাথায় অন্যকে যাচ্ছেতাইভাবে আঘাত করে বা দুঃখ দিয়ে কথা বলা ঠিক না। তাতে পরবর্তীতে বেশ কিছুটা সময় বা জীবনভর তার খেসারত দিতে অথবা অনুতপ্ত হতে হয়। আবার রাগ না করলেও চলে না। রাগ প্রকাশের সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হচ্ছে মাথা গরম না করে, রাগের কথা শান্তভাবে ও সুচিন্তিত ভাষায় জানিয়ে দেওয়া। অথবা একটু সময় নিয়ে এমনও বলা যায় ‘আমি এ ব্যাপারে পরে কথা বলছি’ বা ‘আমি তোমার সাথে একমত না’ ইত্যাদি।

কথা বলুন , পারিপার্শ্বিক অবস্থা সামলে নিয়ে একটু অন্যভাবে। এ সময়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে ভদ্র ও সংযতভাবে কথা বলাটা বুদ্ধিমানের কাজ।
হাস্যরস বা কৌতুকের মাধ্যমে কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বা প্রয়োজনে দোষ স্বীকার করে উত্তপ্ত ও প্রতিকূল পরিস্থিতি অনেকটা হালকা করা যায়। হাসি মিশিয়ে সব দিক বিবেচনা করে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারাটা একটা বড় মাপের সামাজিক দক্ষতার পরিচয়।

‘ক্ষমা মহত্বের লক্ষন’ই শুধু নয়। এটি অন্যকে বশীভূত করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ারও বটে। তাই অপরের দোষে রাগান্বিত না হয়ে ক্ষমাশীল হতে পারলে তা রাগান্বিত ব্যক্তির সহজ ও সাবলীল গতিতে এগিয়ে যাওয়ার বা বড় কিছু অর্জনের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।

রাগ সংবরণ করতে না পারলে শান্তভাবে ১০ থেকে ১ পর্যন্ত গোনা এবং প্রয়োজনে তার পুনরাবৃত্তি করা।
স্থান ত্যাগ করে কিছু সময় খোলামেলা জায়গায় বা অন্য কোথাও ঘুরে আসা।
চুপচাপ থেকে অনেক পরিস্থিতি সামলানো যায়। গলা না চড়িয়ে, কথার পিঠে কথা না বাড়িয়ে অনেক সময়ে নম্রভাবে বা সশ্রদ্ধচিত্তে চুপ থাকার অভ্যাস করা ভাল।

রাগ দমনে গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে সম্মোহনের মাধ্যমে (যেমনঃ ‘শান্ত হও’ , ‘চিন্তা কোরো না ইত্যাদি) নিজেকে শান্ত করা যায়। ডিপ ব্রেদিং এক্সারসাইজের সাথে ইয়োগা, মেডিটেশন, পছন্দের কোন গান বা মিউজিক শুনতে পারলে বেশ ভাল কাজ হয়। ডিপ ব্রেদিং এক্সারসাইজ খুব সহজ ও সাধারন, যেকোনো অবস্থায় এটি করা যেতে পারে, এর জন্য কোন ইনসট্রুমেণ্ট, ব্যবস্থা বা বিশেষ কোন জায়গায় যাওয়ার দরকার হয় না এবং অল্প সময়ে (৫-৭ মিনিট) কার্যকরভাবে এতে উপকার পাওয়া যায়। ডিপ ব্রেদিং এক্সারসাইজের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে, কিছুক্ষণ ধরে রাখার পর (৫ পর্যন্ত গুনে) আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে হয়। এসময়ে অক্সিজেন যত বেশি পাওয়া যায়, মানসিক প্রশান্তিও তার কার্যকারিতাও তত বেশি হয়। উক্ত শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্রিয়া দুশ্চিন্তা, অশান্তি, উদ্বেগ ও রাগ নিরসনের একটা চমৎকার অস্ত্র। এর নিয়মিত চর্চায় গভীর ঘুম হয়, শরীর ও মন ভাল থাকে।

 

ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ (রাসেল)

লালমাটিয়া, ঢাকা।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.