বিশ্বব্যাপী ৩০ শতাংশ বয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ যথাক্রমে ৯০ এবং ১৪০ মি. মি. পারদের বেশি হলে আমরা তাকে বলি উচ্চ রক্তচাপ। একজন ব্যক্তির রক্তচাপ সব সময় একই রকম থাকে না। দিনে-রাতে বিভিন্ন কারণে রক্তচাপ ওঠানামা করে। বিভিন্ন কারণে এটি বেড়ে যেতে পারে। মানসিক অভিঘাত এর মাঝে অন্যতম। এ ছাড়া শরীরচর্চা, এমনকি কথাবার্তা, হাসি, যৌনকর্ম, নিদ্রাহীনতাÑএগুলো সবই রক্তচাপে তারতম্য ঘটাতে পারে। এমনকি খাবার গ্রহণের আগে ও পরে রক্তচাপ ভিন্ন হয়ে থাকে। হাসপাতালে কিংবা চেম্বারে ডাক্তারের কাছে এলে মানসিক উদ্বিগ্নতা কিংবা দুশ্চিন্তার প্রভাবে রক্তচাপ কিছুটা বেড়ে যায়। এমন ঘটনা ঘটতে পারে প্রতি তিনজনের মাঝে একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে। এটাকে বলে, হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন।

শোয়া, বসা, কিংবা দাঁড়ানো অবস্থায় রক্তচাপ ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত শোয়া অবস্থায় রক্তচাপ বেশি থাকে। দাঁড়ানো অবস্থায় রক্তচাপ সামান্য কমে যায়। রক্তচাপ পরিমাপের সময় রোগীকে বসতে হবে আরামপ্রদ অবস্থায় চেয়ারে পিঠ লাগিয়ে। বসা অবস্থায় রক্তচাপ পরিমাপ হলো আদর্শ। হাত রাখতে হবে হƒৎপিণ্ড বরাবর। হাত ঝুলিয়ে দিলে কিংবা পা ক্রস করে বসলে রক্তচাপ সামান্য বেশি হতে পারে। রক্তচাপ পরিমাপের আদর্শ সময় হলো সকালবেলা। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রস্রাব-পায়খানা সেরে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নিন। চা, কফি, কিংবা কোনো ওষুধ গ্রহণের আগে রক্তচাপ মাপুন। এ সময়ে পেপার-পত্রিকা কিংবা ই-মেইল দেখা থেকে বিরত থাকুন। এগুলো আপনার রক্তচাপের ওপর  প্রভাব ফেলতে পারে। মিনিট খানেক ব্যবধানে দুবার রক্তচাপ মাপুন। চা, কফি, সিগারেট ও অ্যালকোহল সেবনের ৩০ মিনিটের মাঝে রক্তচাপ পরিমাপ করলে বেশি পাওয়া যায়। এমনটি হতে পারে শরীরচর্চা করার পরেও। মূত্রথলি পূর্ণ অবস্থায় রক্তচাপ মাপা ঠিক নয়।

প্রেশার কাফ যাতে হাতে ঢিলেঢালাভাবে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আঁটসাঁট কিংবা মোটা কাপড়ের ওপরে প্রেশার পরিমাপ করা ঠিক হবে না। প্রেশার মাপার কাফ ত্বকের সংস্পর্শে থাকলে সবচেয়ে ভালো। কাফ হতে হবে সঠিক মাপের। মোটাসোটা মানুষের জন্য আলাদা কাফ ব্যবহার করতে হবে। ছোটদের জন্য রক্তচাপ পরিমাপের কাফ হবে ছোট। নয়তো রক্তচাপ সঠিক পরিমাপ হবে না।

 

লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন আহমদ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, বরিশাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.