মূত্রাশয় পাথরকে ভেসিক্যাল ক্যালকুলি বা ব্লাডার স্টোন বলা হয়। প্রস্রাবের পর মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি না হলে, বার বার প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে বা আরও কিছু শারীরিক কারনে মূত্রাশয়ে খনিজ পদার্থ জমা হয়ে শক্ত বস্তু তৈরী করে, যা মূত্রাশয় পাথর নামে পরিচিত। মূত্রাশয়ে জমা প্রস্রাব ঘনীভূত হয় এবং তরলের মধ্যে খনিজগুলো ষ্ফটিকে পরিণত হয়। ইউরিক এসিড, এটা শরীরে বিপাকের সময় তৈরী হয়। সবচেয়ে সাধারণভাবে মূত্রাশয় পাথর তৈরী হয় এই এই ইউরেট দিয়েই। মূত্রাশয় পাথর মূত্রাশয়ে থাকলেও সবসময় উপসর্গ সৃষ্টি করে না।

লক্ষণ

মূত্রাশয় পাথর মূত্রাশয়ে থাকলেও অনেক সময় তেমন লক্ষণ উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু পাথর যদি মূত্রাশয়ে জ¦ালাতন করে তবে নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিতে পাবে-

১. প্রস্রাব ত্যাগের সময় মূত্র বের হতে বেশি সময় নেয়।
২. প্রস্রাবের সময় ব্যথা ও অস্বস্তি।
৩. তলপেটে ব্যথা।
৪. ঘন ঘন মূত্রত্যাগ এবং বেদনাদায়ক প্রস্রাব।
৫. প্রস্রাবে রক্ত।
৬. অস্বাভাবিক অস্বচ্ছ গাঢ় এবং দূর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব।

কারণ

১) প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির ফলে পুরুষদের মূত্রাশয়ে পাথর তৈরী হয়। বর্ধিত প্রোস্টেট প্রস্রাবের প্রবাহকে এবং মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি হতে বাধা দেয়।

২) সাধারণত স্নায়ুগুলো মস্তিস্কে হতে মূত্রাশয়ের পেশিতে বার্তা বহন করে, যা মূত্রাশয়ের পেশিগুলোকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। মেরুদন্ডের আঘাত, স্ট্রোক কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্যা সমস্যার কারণে স্নায়ুগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হলে মূত্রাশয় সম্পূর্ণরুপে খালি নাও হতে পারে। এটি নিউরোজেনিক ব্লাডার নামে পরিচিত।

৩) মূত্রাশয় সম্পূর্ণরুপে খালি না হয়ে পাথর তৈরী হতে পারে।

৪) কখনো মূত্রাশয়ে প্রস্রাবের ধারণ ক্ষমতা, সঞ্চয় বা নির্মূল করার ক্ষমতাও পাথর গঠন করতে পারে।

৫) মূত্রাশয়ে ক্যাথেটার ব্যবহারে মূত্রনালিতে ঢোকানো সরু টিউবের কারণে পাথর হতে পারে।

৬) মূত্রাশয়ের প্রদাহ কখনো কখনো মূত্রনালির সংক্রমণ বা শ্রোণীতে বিকিরণ থেরাপির কারণে পাথর হতে পারে।

৭) ছোট কিডনীর পাথর মূত্রনালী দিয়ে মূত্রাশয়ের মধ্যে যেতে পারে এবং তা বের না হলে মূত্রাশয়ে পাথর তৈরী করতে পারে।

রোগ নির্ণয়
মূত্রাশয়ের কেইউবি এক্স-রে

১. ইউরিনালাইসিস।
২. সিস্টোস্কপি।
৩. পেটের আল্ট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যান।
৪. ইন্ট্রাভেনাস পাইলোগ্রাম।

ঝুঁকি
পুরুষদের, যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি তাদের ক্ষেত্রে রোগটি হওয়ার আশংকা থাকে। বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যা, যেমন: স্ট্রোক, পারকিনসন্স ডিজিজ, স্পাইনাল কর্ডের আঘাত, ডায়াবেটিস, হার্নিয়েটেড ডিস্ক এবং অন্যথ্য সমস্যা মূত্রাশয় কার্য নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে।

জটিলতা
সঠিক চিকিৎসা না করা মূত্রাশয় পাথর দীর্ঘমেয়াদী প্রস্রাবের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন: ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব।
অনেক সময় পাথর মূত্রানালীতে চলে আসে এবং প্রস্রাবের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।
মূত্রাশয় পাথরের কারণে মূত্রনালিতে বারবার ব্যাকটেরিয়ার প্রদাহও সৃষ্টি হতে পারে।

প্রতিরোধ
মূত্রাশয় পাথর কিছু অন্তর্নিহিত কারণে হতে পারে যা প্রতিরোধ করা অত্যন্ত কঠিন। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে পাথর হওয়ার হার কমিয়ে আনা সম্ভব। যেমন:
অস্বাভাবিক প্রস্রাবের লক্ষণ থাকলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্রোস্টেট বৃদ্ধি এবং ইউরোলজিক অবস্থায় প্রাথমিক নির্ণয় হলে পাথর হওয়ায় ঝুঁকি কমে।
প্রচুর তরল পান করতে হবে। তরল পানে মূত্রাশয়ে খনিজগুলোর ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে।

 

মোঃ হুমায়ুন কবীর

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, গবেষক, স্বাস্থ্য নিবন্ধকার।
রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩, নবাব কাঁটারা, নিমতলী, চাঁনখারপুল, ঢাকা- ১০০০।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.