ডাবল ভিশন বা কোনো জিনিস দুটি দেখাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডিপ্লোপিয়া বলা হয়। ডিপ্লোপিয়াকে দুই ভাগ করা হয়। ১. মনোকুলার (এক চোখের) ডিপ্লোপিয়া ২. বাইনোকুলার (দুই চোখের) ডিপ্লোপিয়া। সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডিপ্লোপিয়া দেখা দিতে পারে। এক চোখ হাত দিয়ে বন্ধ করে অন্য চোখে কোনো বস্তু দুটি করে দেখা গেলে তাকে ইউনিকুলার ডিপ্লোপিয়া বলা হয়। এ ধরনের ডিপ্লোপিয়া ছানির কারণে হতে পারে, আবার ম্যাকুলা বা কর্নিয়ার ব্যাধির কারণেও হতে পারে। দুই চোখ খোলা রেখে একই বস্তু দুটি করে দেখা গেলে তাকে বাইনোকুলার ডিপ্লোপিয়া বলা হয়।

আমাদের দুটি চোখই স্বাধীনভাবে বস্তুর ছবি শনাক্ত করে। দুটি চোখ বস্তুটি আলাদা করে দেখে না। কারণ, মস্তিষ্ক এমন নিখুঁতভাবে চোখের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পেশিকে নিয়ন্ত্রণ করে, যাতে দুটি চোখের দৃষ্টি একটি বস্তুতেই ফোকাস হয়। মস্তিষ্ক তখন দুই চোখের তৈরি ছায়া বা ইমেজকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেখায়। এই ক্ষমতার নাম সিঙ্গেল বাইনোকুলার ভিশন। কোনো কারণে চোখের এই পেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা দুর্বল হলে অথবা মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতে কোনো সমস্যা হলে দৃষ্টিতে সমস্যা তৈরি হয়। তখন কোনো বস্তু একই সঙ্গে দুটি, তিনটি, পাশাপাশি বা ওপর-নিচে আছে বলে মনে হয়। একই বস্তুর দুটি প্রতিচ্ছবি দেখা গেলে তাকে ডাবল ভিশন বলে।

এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি একই বস্তুর দুটি প্রতিচ্ছবি একটির সাপেক্ষে আরেকটি লম্বা, অনুভূমিক (লম্ব ও অনুভূমিক উভয়ই) বা আড়াআড়ি দেখে থাকেন। সাধারণত এক্সট্রাঅকুলার মাসল বা পেশির স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হলে এমনটা হয়। এই সমস্যার ফলে দুই চোখ স্বাভাবিক থাকলেও কোনো বস্তুর সঠিক প্রতিচ্ছবির জন্য সঠিকভাবে সমকেন্দ্রী হতে পারে না। কিছু শারীরিক সমস্যা, নিউরোমাকুলার জাঙ্কশনের সমস্যা ও মাংসপেশিকে উদ্দীপনকারী ক্র্যানিয়াল নার্ভের সমস্যার কারণে ডাবল ভিশন হতে পারে।

চোখের পেশিগুলো নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি স্নায়ু সুনির্দিষ্ট করা আছে। যেমন অকুলোমটর নার্ভ, ট্রকলিয়ার নার্ভ, এবডুসেন্ট নার্ভ। এগুলো মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের বাইরে এসে চোখের পেছন দিকে চক্ষু কোটরে (অর্বিট) প্রবেশ করে ও চোখের পেশিতে পৌঁছায়। স্নায়ুর এ যাত্রাপথে এগুলো বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সুপরা-নিউক্লিয়ার-অকুলোমটোর কোনো সমস্যা বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের কারণেও এই সমস্যা দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই সমস্যার কারণে একই বস্তুর দুটি প্রতিচ্ছবি দেখেন। ডাবল ভিশনের প্রকৃত কারণ শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কের কোনো সমস্যার কারণে ডাবল ভিশন হলে তা বিপজ্জনক। রোগের শুরুতেই একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে চোখ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ কারণের মধ্যে ব্রেইন টিউমার, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্কের প্রদাহ অন্যতম। থাইরয়েড বা মায়াসথেনিয়ায় হরমোন ও অন্যান্য পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

 

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এ কে আজাদ

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন

আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.