পুরুষরা সবচেয়ে বেশি ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এর পরই রয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসার। ৫০ শতাংশ রোগীর বয়স সাধারণত ৬৫-এর বেশি হয়। কারও পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২-৩ গুণ বেড়ে যায়।

লক্ষণ: প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত বেশি লক্ষণ থাকে না। তবে প্রস্রাবে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমনÑপ্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে সমস্যা ও ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা, সহবাসের সময় ব্যথা করা, প্রস্রাবে বা মিলনে রক্ত যায়, পিঠে বা কোমরে যন্ত্রণা ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ নিয়ে আসে।

পরীক্ষা: প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দিলে কয়েক ধরনের পরীক্ষা করা হয়। যেমন

এক. রক্তের পিএসএ/প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন্ট পরীক্ষা। সাধারণত রক্তের পিএসএর মাত্রা ১ থেকে ৪-এর মধ্যে থাকে। ৪-এর বেশি হলে ক্যানসারের আশঙ্কা আছে;

দুই. ডিজিটাল রেক্টাল টেস্ট সাধারণত একজন ইউরোলজিস্ট রোগীর পায়ুপথে আঙুল দিয়ে করে থাকেন;

তিন. মাল্টিপ্যারামেট্রিক এমআরআই (প্লাজম অন্ত্রনাস);

চার. প্রোস্টেট বায়োপসি (ক্যানসার নির্ণয় করার জন্য);

পাঁচ. স্টেজিং পরীক্ষা (ক্যানসার অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে কি না)।

চিকিৎসা: প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমনÑ রোগীর বয়স, রোগীর অন্যান্য রোগ ও পারফরম্যান্স, ক্যানসার স্টেজ ও গ্রেড এবং রোগীর ইচ্ছা। রোগী স্টেজ ওয়ান ও টু-এ থাকলে সার্ভিলেন্স, প্রোস্টটেকটমি, রেডিওথেরাপি পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। স্টেজ থ্রিতে থাকলে প্রোস্টটেকটমি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি পদ্ধতিতে চিকিৎসা চলে। রোগী স্টেজ ফোর-এ থাকলে সিমসি রিলিজ করা, অ্যান্ডজেন ডিক্রাইজেশন থেরাপি/কেসথেরাপি/রেডিওথেরাপি পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়।

প্রতিরোধে করণীয়: প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের সবজি, যেমনÑ টমেটো, রসুন, মাশরুম, বেগুন, ব্রুকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম রাখুন। এছাড়া পেঁপে, তরমুজ, আম, বেল খান। সয়া সিড, তিসির বীজ, বাদাম, আখরোট এবং ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ মাছ ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এছাড়া গ্রিন টি ক্যানসারের সেল বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ক্যানসার প্রতিরোধে দুগ্ধজাতীয় দ্রব্য, রেডমিট কম খেতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

সাধারণত রক্তের পিএসএ পরীক্ষা করে আমরা প্রোস্টেট ক্যানসার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে পারি। যত দ্রুত রোগ শনাক্ত করতে এবং চিকিৎসা দিতে পারব, রোগীর সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল তত বাড়তে পারে।

 

ডা. মুন্সী আকিদ মোস্তফা

ইউরোলজিস্ট অ্যান্ড ইউরো অনকোলজিস্ট ও কনসালট্যান্ট, মনোয়ারা হসপিটাল (প্রা.) লিমিটেড, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.