শীত এলে অনেক মানুষের পেশিতে ক্রেম্পিং বা খিঁচুনি হয়। এর অনেক কারণ থাকতে পারে। বয়স্ক মানুষের এটি তো হয়ই, সেই সঙ্গে যাদের আর্থ্রাইটিসজনিত সমস্যা আছে, তাদেরও এই শীতে পেশির খিঁচুনির প্রকোপ বাড়ে। একে অনেকে ঘুমের মধ্যে পা টেনে ধরা বলে জানেন। অনেকে এটার জন্য নানা ওষুধ খুঁজে থাকেন; কিন্তু এটি হয় শরীরে পুষ্টি ও পানির ঘাটতির কারণে।

যে কারণে পেশিতে খিঁচুনি হয়

  • পানিশূন্যতা হলে শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট গিয়ে পেশির খিঁচুনি হতে পারে।
  • সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটগুলো পেশির সঠিক ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়। এগুলোর মাত্রা কমে গেলে পেশির খিঁচুনি হতে পারে।
  • দীর্ঘক্ষণ গরমে থাকলে বা দীর্ঘ সময় ব্যায়ামের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এতেও পেশির খিঁচুনি হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে পেশিগুলো টান টান হয়ে যাওয়ার কারণেও খিঁচুনি হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও এটি হতে পারে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও পেশির খিঁচুনি হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, থাইরয়েডের সমস্যা ইত্যাদি কারণেও এটি হতে পারে।
  • শীতে শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়েও ক্রেম্পিং বা পেশির খিঁচুনি হতে পারে।
  • ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যের জন্য নিয়মিত কিছু খাবার খেয়ে শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

পেশির খিঁচুনি প্রতিরোধের উপায়

» বিট জাদুকরী পথ্য: পেশিতে ক্রেম্পিং বা খিঁচুনি হলে পেশি টান টান হয়ে যায়। তখন পা শিথিল করা যায় না। এটি কষ্টদায়ক ও অস্বস্তিকর। এ জন্য বিট খেতে পারেন। এতে ইলেকট্রোলাইট ঠিক করার প্রায় সব উপাদান আছে। এটি খেলে পুষ্টির ঘাটতিজনিত কারণগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। বিশেষ করে দিনে দুবেলা অর্ধেক পরিমাণ বিট খেতে পারেন সালাদ কিংবা জুস করে।

» কলা পরীক্ষিত ফল: কলা পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামও আছে। এগুলো ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক রাখে। তাই নিয়মিত কলা খাওয়া পেশির খিঁচুনি রোধে ম্যাজিক পথ্য হিসেবে কাজ করে।

» মিষ্টি আলুতে উপশম: কলার মতো মিষ্টি আলুও পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামে ভরপুর। মিষ্টি আলু খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়ার কারণ, এতে কলার চেয়ে ছয় গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে। কেবল মিষ্টি আলু নয়, আলু ও কুমড়াও দারুণ খাবার এ ক্ষেত্রে। এ ছাড়া মিষ্টি আলুতে প্রাকৃতিকভাবে পর্যাপ্ত পানি থাকে। ফলে এটি শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখতে কাজ করে।

» পর্যাপ্ত পানি পান করুন: সাধারণত আমাদের এই জলবায়ুতে ২ থেকে আড়াই লিটার পানি প্রতিদিন পান করা উচিত। কিন্তু শীতের দিনে পানি পানের পরিমাণ কমে যায় বলে শরীরে পানির ঘাটতি হয়। পেশি ক্রেপিং হওয়ার অন্যতম কারণ এটি। এই শীতে কুসুম গরম পানি পান করে শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখুন।

 

আলমগীর আলম

খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরায়মকেন্দ্র 

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.