খাদ্যের প্রধান উপাদান ছয়টি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভিটামিন ও মিনারেল। এই ভিটামিন ও মিনারেলের প্রধান উৎস হচ্ছে শাকসবজি ও ফলমূল। মাছ-মাংস থেকে অল্প কিছু ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের দেশে খাবারের বৈচিত্র্য আছে। খাদ্যের বৈচিত্র্য আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকার।

দেশে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন প্রজাতির শাকসবজি আর ফলমূল পাওয়া যায়। প্রতিটি শাকসবজি আর ফলমূল বিশেষ বিশেষ পুষ্টিগুণে ভরপুর। আবার একই ঋতুতে বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি আর ফলমূল পাওয়া যায়। আমাদের উচিত একই ধরনের শাকসবজি না খেয়ে সব মিশিয়ে সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া, যেটাকে আমরা ‘রেইনবো ভেজিটেবল’ বলি।

কেন খাব মিশ্র সবজি: আমাদের শরীরের প্রতিটা অঙ্গের কার্যকলাপের জন্য আলাদা পুষ্টি উপাদান লাগে। যেমন চোখের যত্নে ভিটামিন এ প্রয়োজন হয়, কিন্তু দাঁতের মাড়ির জন্য প্রয়োজন ভিটামিন সি। অন্যদিকে চুল ও ত্বকের যত্নে ক্যারোটিন, ভিটামিন বি ও ভিটামিন ই’র প্রয়োজন হয়। কিন্তু একই ঋতুতে যেসব সবজি পাওয়া যায়, সেগুলোয় হয়তো যেকোনো একটি ভিটামিন বা মিনারেল বেশি থাকে।

যেমন গাজরে ভিটামিন এ বেশি থাকলেও অন্যান্য ভিটামিন কম থাকে। আবার ফুলকপিতে ভিটামিন বি বেশি। ক্যাপসিকামে ভিটামিন সি কিছুটা বেশি। আবার শালগম ও পালং শাকে ভিটামিন কে বেশি। ব্রকলি ও ঢ্যাঁড়সে ক্যালসিয়াম বেশি থাকে। আবার শিমের বিচি, মটরশুঁটি ও মাশরুমে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে। টমেটোতে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ বাড়ায়।

দেখা যাচ্ছে, একজন মানুষকে প্রতিটি ভিটামিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পেতে হলে প্রতিটি সবজি আলাদা করে রান্না করতে হবে। কিন্তু আমরা এক দিনে এতগুলো আলাদা সবজি বাসায় রান্না করি না বা করা সম্ভবও হয় না। কিন্তু গাজর, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, শালগম ইত্যাদি সবজি দিয়ে একটা পাঁচমিশালি সবজি রান্না করলে ওই সবজিতে সব ধরনের ভিটামিন একসঙ্গে পাওয়া যায়। তাই সব সবজি একসঙ্গে রান্না করলে শরীরে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদাও পূরণ হবে। পাঁচমিশালি সবজি শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ তারা সবজি কম খেতে চায়। তাই শিশুদের কয়েক ধরনের সবজি দিয়ে পাঁচমিশালি সবজি রান্না করে খাওয়াতে হবে। এতে অল্প সবজি খেলেও সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পাবে।এ কথা শাক বা ফলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই কয়েক ধরনের শাক মিশিয়ে রান্না করুন বা কয়েক রকমের মৌসুমি ফল কেটে সালাদ করে খান।

মো. ইকবাল হোসেন

জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.