জীবনের একটা সময়ে প্রায় সবাইকে চোখের ছানি বা ক্যাটারেক্ট অস্ত্রোপচারের জন্য তৈরি হতে হয়। ছানির একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ঘোলা লেন্সটি অপসারণ করে সেখানে একটি স্বচ্ছ কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা। এর আগে কম্পিউটারের সাহায্যে লেন্সটির পাওয়ার কত হবে; তা নির্ধারণ করে নেয়া হয়। দৃষ্টিশক্তি দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, আলোকরশ্মি রেটিনায় আপতিত হওয়া আবশ্যক। এখানে লেন্স একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। দ্বিতীয়ত, রেটিনায় বিদ্যমান স্নায়ু বা রিসেপ্টরের সক্ষমতা অটুট থাকতে হবে, যাতে রেটিনা আপতিত আলোকরশ্মিকে তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তর করতে পারে। কারণ এ তড়িৎপ্রবাহ মস্তিষ্কে পৌঁছে বস্তুর ইমেজ তৈরি করে দেখার বিষয়টিকে পরিস্ফুটিত করে। ছানি অস্ত্রোপচারে আলোকরশ্মির আপতিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও রেটিনায় সমস্যা থাকলে তড়িৎপ্রবাহ বা সিগন্যাল মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে অস্ত্রোপচার যথাযথভাবে সম্পন্ন হলেও দৃষ্টির সমস্যা রয়ে যায়।

রেটিনার সমস্যার অন্যতম কারণগুলো হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা প্রভৃতি। একে বলা হয় রেটিনোপ্যাথি। রেটিনোপ্যাথির সমস্যা আগে থেকেই বিদ্যমান থাকলে ছানি অস্ত্রোপচারের পরও দৃষ্টির সমস্যা কিছুটা থেকে যেতে পারে। চোখের অসুস্থতা যেমন গ্লুকোমা, মেকুলার ডিজেনারেশন, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, মেকুলার হোল, রক্তনালি ও রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা, ইউভিয়াইটিসের জটিলতা প্রভৃতি কারণে ছানি অস্ত্রোপচারের পরও অনেক সময় ভালো না দেখার আশঙ্কা থেকে যায়। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন অস্ত্রোপচারের আগেই ভালো করে সার্বিক বিষয় পরীক্ষা করে দেখে নেয়া। যদি এমন আশঙ্কা আগে থেকে আঁচ করা যায়, তবে বিষয়টি রোগীকে আগেই জানিয়ে রাখতে হবে। তাহলে অস্ত্রোপচারের পর ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা থাকে না। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে বিষয়টিকে মেনে নিয়ে বোঝাপড়ার মাধ্যমে পরবর্তী ধাপের চিকিৎসা নিতে হবে। অর্থাৎ রেটিনার সমস্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

অনেক সময় ছানির কারণে রেটিনার সমস্যা নিরূপণে কিছুটা অস্পষ্টতা থেকে যায়, যা ছানি অস্ত্রোপচারের পর স্পষ্ট হয়। ফলে রেটিনার সমস্যা আগে থেকে আঁচ করতে পারলে আগেভাগেই ছানি অস্ত্রোপচার করিয়ে নেয়া ভালো। কারণ রেটিনার সমস্যা শনাক্তকরণে ও এর চিকিৎসার সুযোগ নিতে ছানি অপসারণ অনেক সময় জরুরি হয়ে পড়ে। ছানি অপসারণ করা হলেই শুধু লেজার চিকিৎসার মতো কিছু পদক্ষেপ নেয়া সহজতর হয়।

 

ডা. মো. ছায়েদুল হক

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন

আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, রিং রোড, আদাবর, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.