গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ খুবই খারাপ একটি অবস্থা। এ রোগের সময় মতো চিকিৎসা না করা হলে তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। এমনকি ঝুঁকির মধ্যে থাকে মা ও গর্ভের শিশু। তাই সঠিক সময় রোগ নির্ণয় করে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের নানাদিক নিয়ে কথা বলেছেন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাফেয়া খানম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. সাদিয়া সুলতানা রেশমা।

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ কী?

আমাদের শরীরে যে রক্ত রয়েছে তার অবস্থাকেই আমরা রক্তচাপ বলি। রক্তচাপের দুইটা ধাপ রয়েছে। স্বাভাবিক এবং উচ্চ মা উচ্চ মাত্রা। স্বাভাবিক বলতে বোঝায় ১১০ থেকে ১৩০ এর মধ্যে উপরেরটা। যখন আমাদের প্রেগনেন্সি অবস্থায় বা প্রেগনেন্সির ২০ সপ্তাহ আগে যদি আমাদের প্রেশারটা নরমাল অবস্থা থেকে বেড়ে যায়, সেটাকে আমরা বলি উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন ইন প্রেগনেন্সি। এটা বাচ্চা হওয়ার ১২ সপ্তাহ পরেও হতে পারে।

কিভাবে উচ্চ রক্তচাপ ও এর প্রভাবে জটিলতাগুলো নির্ণয় করা হয়?

কিছু কিছু পরীক্ষা আগে থেকেই করে করলে গর্ভবতী মা উচ্চ রক্তচাপ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা মায়ের জন্য এবং কিছু পরীক্ষা বাচ্চার জন্য । মায়ের পুরো রক্ত উঠানামা গণনা করে কিনা, তার মধ্যে সিপিসি, হিমোগ্লোবিন পারসেন্টিস দেখতে পারি। পুরো প্লাটিলেট গণনা করে দেখতে পারি। আরও কিছু পরীক্ষা সিবিসি’র মধ্যে করা হয়।

এটা রোগী নিজেই করতে পারে। ২৪ ঘন্টায় আমাদের কতটুকু প্রোটিন বের হচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। এছাড়াও পুরো প্রোটিন এবং ক্রিয়েটিভ রেশিও দেখতে হবে। আরেকটা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি ইউরিক টেস্ট করতে পারি। এটাতে আমরা বাচ্চার অবস্থা বুঝতে পারি। এছাড়াও কিছু লিভার সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে হয়। আমাদের যে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা রয়েছে, তা খেয়াল এবং পরীক্ষার মধ্যে আনতে হবে।

যারা চেকআপে আসবেন না, তারা কিভাবে বুঝবেন উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে?

রোগীদের সাধারণত তেমন কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষণ থাকে না। তবে পা ফোলা থাকতে পারে। দেখা যেতে পারে, সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে তার হাতের আংটি খুলছে না। এক্ষেত্রে যারা নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকেন, তাদেরকে ডায়াগনসিস করা আমাদের জন্য সহজ। আমরা তাদেরকে কাউন্সিলিং করতে পারি। যারা সঠিক সময়  আসেন না, তারা পরবর্তীতে আসলে খুব খারাপ অবস্থা নিয়ে আসেন। এছাড়াও তাদের মাথাব্যথা হতে পারে। চোখে ঝাপসা দেখতে পারে বা একেবারে নাও দেখতে পারে। তারপর প্রস্রাব কমে আসবে। অনেক ক্ষেত্রে খিঁচুনিও নিয়ে আসতে পারে। তার হঠাৎ করে ব্লিডিং শুরু হয়ে যেতে পারে। বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব লক্ষণগুলো নিয়ে তারা জরুরি আমাদের কাছে হাজির হয়। যা মা এবং বাচ্চা দু‘জনের জন্যই ভয়ঙ্কর।

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ মা ও  গর্ভের বাচ্চার জন্য কতটা বিপজ্জনক? 

এটা প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েদের জানা উচিত। রক্তচাপ বাড়লে মায়ের ব্রেনের সমস্যা হতে পারে। যেটাকে আমরা বলি স্ট্রোক। হার্টের সমস্যা হতে পারে। হার্টের কার্ডিয়াল ফেইলর হয়ে যেতে পারে। কিডনি ও লিভারের সমস্যা হযতে পারে। এছাড়াও মায়ের একলামশিয়া হয়ে যেতে পারে। বাচ্চার ক্ষেত্রে মায়ের ফুলের মাধ্যমে খাওয়া থেকে শুরু করে অক্সিজেনসহ সবকিছু হয়। কিন্তু রক্তচাপ বাড়লে বাচ্চা এগুলো ঠিক মত পারবে না। বাচ্চার বাড়ন্তটা ঠিকমতো হবেনা। এছাড়া অপরিপক্ক ডেলিভারি হয়ে যেতে পারে। বাচ্চা যে পানির মধ্যে থাকে সেটা কমে যেতে পারে। ফলে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হতে পারে। চূড়ান্ত বিষয় বাচ্চা পেটের মধ্যে মারা যেতে পারে।

 

গ্রন্থনা: নাবিদ রেজা নাঈম

ডা. সাদিয়া সুলতানা রেশমা

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.