খাবার খেতে গিয়ে অসতর্কতার কারণে অনেক সময় বিষম খেতে হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলে ‘চোকিং’। এ রকম ঘটনায় খাবার শ্বাসনালিতে আটকে মৃত্যুর ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে। প্রতিবছর বিশ্বে অনেক লোক বিষম খাওয়ার ঘটনায় মারা যান। তাই এমন ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

কাদের বেশি হয়: বিষম খাওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। গবেষণায় দেখা যায়, পাঁচ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া যেসব রোগে খাবার গিলতে সমস্যা হয়, যেমন স্ট্রোক, পারকিনসনস ডিজিজ, সেরেব্রাল পালসি, এপিলেপসি, খাদ্যনালির বিভিন্ন রোগ বা টিউমার প্রভৃতি সমস্যায় বিষম খাওয়ার ঝুঁকি বেশি। অবশ্য স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রেও যেকোনো সময় এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে।

জটিলতা: বিষম খেলে সাধারণত শুরুতে কাশি হয় বা হেঁচকি ওঠে। তবে খাবার শ্বাসনালিতে আটকে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়, কথা বলা আটকে যায়, কিংবা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে ফুসফুসের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অল্প সময়ের মধ্যে মুখ ও ঠোঁট নীল হয়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এমন অবস্থায় মস্তিষ্কসহ শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, চিকিৎসার ভাষায় যাকে ‘হাইপোক্সিয়া’ বলে। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসা না করলে রোগীকে বাঁচানো যায় না।

করণীয়: কেউ বিষম খেলে আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখা দরকার। অনেক সময় রোগী জোরে কাশি দিলে আটকে থাকা খাবার বেরিয়ে যায়। না হলে পিঠে চাপড় মেরে বের করার চেষ্টা করতে হবে। পিঠে চাপড় মারার পাশাপাশি পাঁজরের তলায় চাপড় মারলেও খাবার বের হতে পারে। হেইমলিক নামের এক চিকিৎসক-নির্দেশিত পদ্ধতি ‘হেইমলিক ম্যানিউভার’-এর মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রতিহত করা যায়। রোগীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ডায়াফ্রাম অর্থাৎ পেট ও পাঁজরের সংযোগস্থলে দুহাতে মোচড় দেয়ার মতো জোরে ধাক্কা দিলে আটকানো খাবার বের হয়ে আসে। এ পদ্ধতি সবার জেনে রাখা উচিত।

প্রতিরোধ: খাবার গেলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শুকনা খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে পানি খেতে হবে। একবারে বেশি খাবার মুখে দেয়া ঠিক নয়। খাওয়ার সময় বেশি কথা বলা ঠিক নয়।

 

ডা. সাইফ হোসেন খান

মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি,  ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.