হঠাৎ করে মাঝেমধ্যে ঠাণ্ডা লাগলে বা গলায় প্রদাহ হলে আমাদের কণ্ঠ বসে যায় বা বদলে ফ্যাসফেসে হয়ে যায়। সাধারণ সংক্রমণ বা প্রদাহ থেকে যেমন এমনটা হতে পারে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন একটু চিন্তার কারণও হয়ে দাঁড়ায় বৈকি।

কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের সাধারণ ও পরিচিত কারণ হচ্ছে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত কণ্ঠনালির প্রদাহ। তবে আরও অনেক কারণে কণ্ঠনালির স্বর পরিবর্তন হয়, যেমন ভোকাল কর্ড পলিপ, ভোকাল কর্ড নডিউল, ভোকাল কর্ড টিউমার বা ক্যানসার, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা (হাইপোথাইরয়ডিজম), থাইরয়েড অপারেশনের পর, কণ্ঠনালির নার্ভের (রিকারেন্ট ল্যারিনজিয়াল নার্ভ) প্যারালাইসিস প্রভৃতি।

দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ স্বরে কথা বলা বা যাঁদের বেশি কথা বলতে হয়, যেমন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, হকার, কলসেন্টারের চাকরিজীবী ও শিল্পীদেরও কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি মানসিক কারণেও কথা বলা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ল্যারিংক্স বা স্বরযন্ত্রের অবস্থান একটু স্পর্শকাতর জায়গায়। বাইরে থেকে এটি দেখা যায় না। শ্বাসযন্ত্রের ওপর ও নিচের অংশের সংযোগস্থলে থাকে দুটি ভোকাল কর্ড। এর পরই শুরু হয় ট্র্যাকিয়া বা শ্বাসনালি, যা ফুসফুসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। স্বরযন্ত্রের মাধ্যমেই আমরা কথা বলি। আবার শ্বাসনালির প্রবেশদ্বারে এর অবস্থান হওয়ায় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ভোকাল কর্ডের সম্পর্ক রয়েছে।

করণীয়: গলার স্বর পাল্টে যাওয়া মানে ভোকাল কর্ডে কোনো সমস্যা হচ্ছে। স্বর পরিবর্তনের সবচেয়ে পরিচিত কারণ হলো ল্যারেনজাইটিস। এটি দুই রকম হতে পারে। অ্যাকিউট ও ক্রনিক। ঠাণ্ডা লাগা বা হঠাৎ খুব জোরে চিৎকার করে কথা বলা, এসি ও নন-এসির মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন এবং ঠাণ্ডা পানি পান থেকে অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস হতে পারে। বিশ্রাম ও নিয়মিত ভ্যাপার নিলে এটি সেরে যায়। তবে মূলত এর চিকিৎসা গলাকে বিশ্রাম দেয়া।

আবার কখনও ভোকাল কর্ডের চারপাশে তরল জমে। এটি ক্রনিক ল্যারেনজাইটিসের কারণ। স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণেও ক্রনিক ল্যারেনজাইটিস হতে পারে। বিশ্রাম, অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ খেয়েও যদি স্বাভাবিক স্বর ফেরত না আসে, তাহলে বুঝতে হবে অন্য কোনো গুরুতর সমস্যা হয়েছে। দেরি না করে তখনই নাক-কান-গলা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

১৫ দিনের চিকিৎসায় ভালো না হলে কিন্তু দুশ্চিন্তার কারণ আছে। এটি কণ্ঠনালি এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে গলার স্বরের পরিবর্তন হলে নাক-কান-গলা বিশেষেজ্ঞর পরামর্শ নিন।

 

ডা. এম আলমগীর চৌধুরী

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি

আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.