ধূসর অথবা হলুদাভ দাঁতের জন্য প্রাণ খুলে হাঁসতে পারছেন না? বয়সের সাথে সাথে কিছু খাবার এবং পানীয় গ্রহণের ফলে দাঁতে দাগ পড়তে পারে। কিছু খাবার বর্জন এবং দাঁতে কিছু বিশেষ উপাদান প্রয়োগ করলে দাঁতের সাদা দীপ্তি পুনুরুদ্ধার করা সম্ভব। আপনি পুনরায় দেখতে পারেন আপনার ঝলমলে হাসি।

নিজেই দাঁত সাদা করুন ঃ অবাক হয়ে যাচ্ছেন! কিভাবে দাঁত সাদা করবেন? দাঁতের উপরিভাগের দাগ দূর করা যায় বা কমিয়ে আনা যায় ওভার দি কাউন্টার আইটেম বা পণ্য ব্যবহার করে যেমন দাঁত সাদা করা উপাদান সমৃদ্ধ টুথপেষ্ট, সাদা করার স্ট্রিপ এবং অন্যান্য কিট বা সামগ্রী। সামগ্রিক এবং সাধারণ ভাবে দাঁতের দাগ দূর করার জন্য মেজর উপাদান হলো টুথপেষ্টে বিদ্যমান অতি সামান্য পরিমানে ব্লীচ এবং অ্যাবরেসিভ উপাদান।

দাঁত সাদা করার কিট ঃ অধিকাংশ দাঁত সাদা করার কিটস্গুলোতে রয়েছে কার্বামাইড পার অক্সাইড অথবা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। এই রাসায়নিক উপাদান দাঁতের উপরিভাগের এবং কিছু গভীর অংশের বিবর্ণতা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। দাঁত সাদা করার কিটের উপর নির্ভর করে যৌগগুলো ব্রাশ করা যায় অথবা যৌগগুলো জেল রূপে দাঁত সাদা করার জন্য দাঁতের ছাঁচে স্থানান্তর করে মুখের অভ্যন্তরে ৪৫ মিনিট রাখা হয়। তবে এক্ষেত্রে সময় কম বেশি হতে পারে।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁত সাদা করার স্ট্রিপ ঃ দাঁত সাদা করার স্ট্রিপ একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি ঘরে বসে দাঁত সাদা করার জন্য। এগুলোতে সাধারণত ৫% হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিদ্যমান থাকে। বাড়িতে বসেই এসব স্ট্রিপ ব্যবহার করা যায়। দিনে কয়েক মিনিটের জন্য প্রয়োগ করলে এক সপ্তাহের মধ্যে দাঁত আগের চেয়ে সাদা দেখা যাবে। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি মৃদু ব্লীচ যা দাগযুক্ত দাঁত সাদা করতে সাহায্য করে। সর্বোত্তম ভাবে দাঁত সাদা করার জন্য বেকিং সোডার সাথে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশিয়ে দিনে দুই বার ব্রাশ করতে পারেন এক সপ্তাহের জন্য। তবে এই ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।

দাঁত সাদা করার কিট কি দাঁতের ক্ষতি করে? দাঁত সাদা করার কিট বা স্ট্রিপ দাঁতের ক্ষতি করে কিনা তা সবার জানতে হবে। দাঁত সাদা করার স্ট্রিপগুলোতে পার অক্সাইড রয়েছে দাঁতের দাগ তোলার জন্য। আমেরিকান ডেন্টাল এসোসিয়েশন এর মতে যে কোন ধরনের ব্লীচিং দাঁতকে সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। দাঁত সাদা করার স্ট্রিপ মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। আমেরিকান ডেন্টাল এসোসিয়েশন এর মতে এ ধরনের সমস্যা কমিয়ে আনা যায় স্ট্রিপগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে। তাই দাঁত সাদা করার কিট ব্যবহারের আগে প্রয়োগ করার পদ্ধতি জানতে হবে এবং ভালো ব্রান্ডের অর্থাৎ বিশ^মানের স্ট্রিপ বা কিট ব্যবহার করতে হবে।

দাঁত সাদা করার টুথপেষ্ট ঃ টুথপেষ্টে এব্রেসিভ উপাদান রয়েছে যেমন সিলিকা, এলুমিনিয়াম অক্সাইড, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট এবং বেকিং সোডা যা দাঁতের সারফেস বা উপরিভাগের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। দাঁত সাদা করার টুথপেষ্টে সাধারণত ব্লীচিং উপাদান থাকে না কিন্তু অতিরিক্ত পলিশিং অথবা রাসায়নিক এজেন্ট থাকে যা অতিরিক্ত দাগ পরিস্কার করতে সাহায্য করে। গভীরভাবে লেগে থাকা দাগ টুথপেষ্ট দূর করতে পারে না। তবে কিছু আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টুথপেষ্ট রয়েছে যা দাঁত সাদা করার জন্য ব্যবহার করা যায়।

বাড়িতে বসে দাঁত সাদা করার উপায় ঃ মাঝে মাঝে বেকিং সোডার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে দাঁতে প্রয়োগ করলে দাঁত সাদা হয়। লালার প্রবাহ এবং খাবারের স্ক্রাবিং কার্যকারিতা দাঁত সাদা করতে সাহায্য করে। খাবারের মধ্যে রয়েছে আপেল, পিয়ার্স, ষ্ট্রবেরি। ষ্ট্রবেরিতে রয়েছে এসট্রিনজেন্ট, ম্যালিক এসিড নামে পরিচিত যা আপনার দাঁতের বিবর্ণতা দূর করতে পারে। চিনিমুক্ত চুয়িংগাম লালা নিঃসরন করে যা দাঁত ওয়াশ করতে সাহায্য করে। এছাড়া খাবারের এসিড স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।

দাঁত সাদা করার জন্য কয়লা ব্যবহার করবেন না ঃ অনেকেই এখন পর্যন্ত মাঝে মাঝে দাঁত সাদা করার জন্য চারকোল পাউডার বা টুথপেষ্ট ব্যবহার করেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সমীক্ষায় দেখা গেছে চারকোল পাউডার বা টুথপেষ্ট ব্যবহার করলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে ডেন্টিন বের হয়ে যায়। ফলে দাঁত সংবেদনশীল হয়ে উঠে।

ডেন্টাল কাজ ও ডিভাইস এবং দাঁত সাদা করা ঃ যদি আপনার মুখে ডেন্টাল ডিভাইস যেমন ক্রাউন, বন্ডিং, ভিনিয়ারস, ফিলিং, দাঁতের ইমপ্ল্যান্ট অথবা ব্রীজ থাকে তাহলে দাঁত সাদা করার উপাদান নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দাঁত সাদা করার উপাদান আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক দাঁতের উপর কাজ করে কিন্তু অন্য কোন প্রস্তুতকৃত দাঁতের উপর কাজ করে না। ফলে দাঁত সাদা করার উপাদান ব্যবহার করলে কিছু দাঁত সাদা হবে ঠিকই কিন্তু অন্যান্য কৃত্রিম ডিভাইসের সাথে ম্যাচিং বা সামঞ্জস্য থাকবে না। তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

দাঁত সাদা ও উজ্জল করার জন্য করনীয় ঃ দাঁত সাদা ও উজ্জল রাখার জন্য ধূমপান করবেন না। কারণ ধূমপানের কারনে দাঁতে দাগ এবং বিবর্ণতা সৃষ্টি হয়। পান-সুপারি বর্জন করতে হবে। কফি, চা, গাঢ় রং এর চা, কিছু ফলের রস দাঁতে দাগ সৃষ্টি করে। তাই চা, কফি ষ্ট্র দিয়ে পান করলে সবচেয়ে ভালো। এছাড়া চা-কফি পান করার পর ভালোভাবে কুলকুচি করে নিতে হবে। রেডওয়াইন, ক্র্যানবেরি জুস এবং আঙ্গুরের রস দাঁতে দাগ ফেলতে পারে। তাই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

মাউথওয়াশ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে ঃ যে সব মাউথওয়াশে ক্লোরোহেক্সিডিন অথবা সিটাইলপাইরিডিনিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করলে দাঁতে দাগ পড়তে পারে। টেট্রাসাইক্লিন মাউথওয়াশ ধূসর বর্নের বিবর্ণতা সৃষ্টি করে দাঁতের গঠন চলাকালীন সময়ে। যেসব ঔষধ বা সিরাপে আয়রন আছে তা দাঁতে দাগ ফেলতে পারে। অতিরিক্ত ফ্লোরাইড ও দাঁতে দাগ ফেলতে পারে। কিছু এন্টিহিস্টামিন, এন্টিসাইকোটিকস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিরোধক ঔষধ দাঁতে দাগ ফেলতে পারে।

কিছু খাবার দাঁতে দাগ সৃষ্টি করে ঃ ব্লুবেরি, ব্লাকবেরি, কারান্ট জাতীয় রসালো ফল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী কিন্তু দাঁতে দাগ সৃষ্টি করতে পারে। তাহলে এসব ফল খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে? না একদমই না। শুধু মনে রাখতে হবে খাবার গ্রহণের পর মুখ ওয়াশ করে নিতে হবে এবং যেসব খাবার দাঁতে দাগ সৃষ্টি করতে পারে সেক্ষেত্রে দাঁত ব্রাশ করে নিতে হবে। তবে এসব নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেওয়ার কিছুই নেই। শুধু একটু সচেতন হলেই চলবে। আপনি বিষয়টি জানেন এবং বুঝেন তাহলেই চলবে। দেখবেন আপনার দাঁত সাদা ও উজ্জল ঠিকই থাকবে।

সতর্কতা ঃ কিছু ক্ষেত্রে যদি দাঁত ব্লীচ বা সাদা করা হয় তাহলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। এর মধ্যে রয়েছে সংবেদনশীল দাঁত, এনামেলে ক্ষয় রয়েছে, দাঁত কামড়ানোর রোগী এবং যাদের টেম্পেরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টে অচলাবস্থায় রয়েছে। তাই মন চাইলেই দাঁত সাদা করতে যাবেন না। আপনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সু-পরামর্শ গ্রহণ করুন।

ডা. মো. ফারুক হোসেন

মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.