অনিদ্রা একটি ঘুমের ব্যাধি। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে প্রভাবিত করে। ঘুমিয়ে পড়া বা রাতে ঘুমিয়ে থাকাকে কঠিন করে তোলে। ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি ওঠা এবং ঘুমের ব্যাঘাতের পর আবার ঘুমাতে না পারাও অনিদ্রার বৈশিষ্ট্য। অনিদ্রা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ওপর অত্যন্ত খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
অনিদ্রায় ভুগছেন এমন ব্যক্তির মধ্যে মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও দিনের বেলায় তন্দ্রা ও ক্লান্তির ঝুঁকি রয়েছে। অনিদ্রা ব্যক্তিত্বেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটায়। নিদ্রাহীনতা ব্যক্তিকে খিটখিটে, উদ্বিগ্ন করে এবং চাপে ফেলে দেয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনিদ্রা এবং অন্যান্য ঘুমের ব্যাধি খুবই সাধারণ। প্রায় ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মৃদু থেকে মাঝারি অনিদ্রার লক্ষণ রয়েছে এবং ১০-১৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা ভুলে থাকে। বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্কের রাতে প্রায় ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। যাই হোক, এটি ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়। ভালো ও পরিমিত ঘুম একজন মানুষের জীবনে আবশ্যক।
অনিদ্রার প্রধান কারণ হচ্ছে মানসিক চাপ। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
আর্থিক অবস্থা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও কাজের চাপ, ক্লান্তি, স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ, প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক, বিবাহবিচ্ছেদ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি মানসিক চাপের কারণ হতে পারে।
খাবার খাওয়ার পরে এবং ঘুমানোর ঠিক আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা, বিছানার পরিবর্তে চেয়ারে ঘুমানো, চেয়ারের পরিবর্তে বিছানায় কাজ করা, ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিরক্তিকর কাজ করা সবই অনিদ্রার কারণ।
রক্তচাপ ও হাঁপানির জন্য ওষুধ সেবনে অনিদ্রা।
কাজের সময়সূচি পরিবর্তনের কারণে অনিদ্রা শুরু হয়। যেমন: বারবার কাজের শিফট পরিবর্তন করা, বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করা।
দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা।
সন্ধ্যায় বা শোওয়ার আগে অতিরিক্ত খাওয়া।
অ্যালকোহল, ক্যাফেইন বা নিকোটিন সেবন।
যাদের অনিদ্রা বেশি হয়
বয়স ষাটোর্ধ্ব
নারীদের মধ্যে প্রবণতা বেশি
মানসিক অসুস্থতা
শারীরিক অসুস্থতা
অনুপযুক্ত কাজ বা দৈনন্দিন রুটিন সময়সূচি
মানসিক চাপ
অনিদ্রার সম্ভাব্য ধরন
ঘুমের শুরুতে অনিদ্রা।
ঘুম চলাকালীন অনিদ্রা। সারা রাত ঘুমিয়ে থাকতে সমস্যা হয় বা খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার প্রবণতা থাকে।
মিশ্র অনিদ্রা: যখন একজন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়তে এবং সারা রাত ঘুমাতে সমস্যা হয় তখন সেই অবস্থাটিকে মিশ্র অনিদ্রা বলা হয়।
অনিদ্রার লক্ষণ ও উপসর্গ
রাতে ঘুমাতে সমস্যা
রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করার সময় কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করা
কোনো নির্দিষ্ট কাজে মনোযোগ দিতে না পারা
রাতে জেগে থাকা
খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা
সারা দিনের ক্লান্তি ও ঘুম
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
বিরক্তি ভাব
মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে অক্ষমতা
দৈনন্দিন জীবনে ভুল বা দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া
মনোযোগ দিতে বা মনে রাখতে সমস্যা
সকালে রাতের ঘুমে তৃপ্তি বোধ না হওয়া
অনিদ্রার জটিলতা
আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম পাই। অনিদ্রা ও অন্যান্য ঘুমের ব্যাঘাতের বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
স্থূলতা, বিষণ্নতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো স্বাস্থ্যগত জটিলতা ও অবস্থা
দৈনন্দিন কাজে মনোনিবেশ করতে সমস্যা
প্রতিক্রিয়া সময় ধীর যা দুর্ঘটনা ও আঘাতের কারণ হতে পারে
বিরক্তি ও উদ্বেগ
ওজন বৃদ্ধি
চিকিৎসার শুরুতেই আমরা সাধারণত ওষুধের কথা বলি না। অনেকে আবার ওষুধ সেবনে ভয় পায়। তবে ক্ষণস্থায়ী অনিদ্রায় স্বল্পমেয়াদি ঘুমের ওষুধ ভালো কাজ করে।
কগনিটিভ থেরাপি: এই থেরাপি শেখায় কীভাবে নেতিবাচক চিন্তা চেনা যায় ও পরিবর্তন করতে হয়, মানসিক চাপ কমাতে হয় যা অনিদ্রা এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
আচরণগত থেরাপি: এতে কিছু খারাপ অভ্যাস এবং আচরণ এড়ানো যায় ও ভালো ঘুমের সহায়তা করে।
অনিদ্রা প্রতিরোধ করা যায় যেভাবে
সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
বেডরুমে কোনো লাইট ব্যবহার করবেন না, অন্ধকারে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
ঘুমানোর আগে আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না।
শোওয়ার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
সবসময় ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে খাবার খাবেন।
শোওয়ার আগে মৃদু সংগীত শোনা ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে।
আপনার যদি ধূমপানের অভ্যাস থাকে তবে অবিলম্বে আপনার অভ্যাস পরিবর্তন করুন।
মনোবিজ্ঞানীদের সহায়তায় অনিদ্রা প্রতিরোধ করা যায়।
লেখক:
ডা. মো. আসাদুর রহমান
সহযোগী অধ্যাপক, নাক, কান ও গলা (ইএনটি) বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ