অনেকেই মনে করেন বাচ্চার মা-বাবার দুজনের রক্তের গ্রুপ একই রকম হলে হয়তো তাদের বাচ্চার রোগ হতে পারে। বিষয়টি আসলে সেরকম না। বাচ্চার রোগ সাধারণত বংশগত কারণে হয়ে থাকে।
একই বংশের মধ্যে যদি মা-বাবার বিয়ে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে বাঁচার অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে, যেমন- থ্যালাসেমিয়া। থ্যালাসেমিয়া রোগটি যাদের বংশে রয়েছে, তারা নিশ্চয় জানেন এর ভয়াবহতা কতটুকু।
এক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া রোগের ক্ষেত্রে একটি বাচ্চাকে প্রতি মাসে নিয়ম করে একবার রক্ত দিতে হয়। কারণ, এক্ষেত্রে বাচ্চাটির রক্ত উৎপন্ন করার ক্ষমতা থাকে না। এক্ষেত্রে বাচ্চাটাকে যে রক্ত দেওয়া হচ্ছে, সেই লোহিতকণিকা ভেঙে যাচ্ছে প্লীহাতে।
এই থ্যালাসেমিয়া রোগটা কীভাবে হচ্ছে? এর মানে এই নয় যে, বাবা-মায়ের রক্তের গ্রুপ একই রকম। এটা আসলে জিনগত রোগ বা বংশগত রোগ। এই জিনগত বা জেনেটিক রোগগুলো সাধারণত বাবা-মায়ের বংশের মধ্যে বিয়ে হলে হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি।
অনেক অভিভাবক জিজ্ঞেস করে থাকেন যে, বাবা-মায়ের রক্তের গ্রুপ একই রকম হলে বাচ্চার কোনো অসুবিধা হবে কিনা। সেক্ষেত্রে বলবো- না, বাবা-মায়ের রক্তের গ্রুপ একই রকম হলে বাচ্চার সেরকম কোনো অসুবিধা হবে না। তবে একই বংশের মধ্যে বিয়ে হলে, যেমন- মামাতো-ফুফাতো ভাইবোন, চাচাতো-খালাতো ভাইবোনের সঙ্গে বিয়ে হলে এ ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আবার মায়ের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে কিছু রোগ কোয়েনসাইড হয়। সেটা হচ্ছে- নবজাতক অবস্থায় যে জন্ডিস হয়, সেটা কিছুটা মায়ের রক্তের গ্রুপে ওপর নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে মায়ের রক্তের গ্রুপ ‘নেগেটিভ’ এবং বাবার রক্তের গ্রুপ ‘পজেটিভ’ হলে সে ক্ষেত্রে বাচ্চার রক্তের গ্রুপ ‘পজেটিভ’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি মায়ের রক্তের গ্রুপ ‘নেগেটিভ’ এবং বাচ্চার রক্তের গ্রুপ ‘পজেটিভ’ হয় সে ক্ষেত্রে আরএইচ ইনকম্পেটিবিলিটি হয়।
এটা যখন হয় তখন নবজাতকের জন্ডিস মারাত্মক আকার ধারণ করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় নবজাতক বাচ্চার রক্ত পরিবর্তন করা লাগতে পারে বা সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়। সুতরাং রক্তের গ্রুপ ‘নেগেটিভ’ মায়েদের বাচ্চা কনসিভ করার সময় এই জিনিসগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
ডা. নাঈমা সুলতানা
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিডফোর্ট হাসপাতাল, ঢাকা