শীতে সর্দি-জ্বর খুব সাধারণ সমস্যা হলেও দীর্ঘ ঠান্ডা-কাশিসহ অন্যান্য কারণে শিশুর নাকের পেছনে মাংস বেড়ে যেতে পারে। একে বলে অ্যাডিনয়েড গ্রন্থির সমস্যা। নাকের পেছনে ও তালুর ওপরে থাকে অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি। এটি নাকের পেছনের টনসিল নামেও পরিচিত। অ্যাডিনয়েড গঠনগত দিক থেকে টনসিলের মতো, যা খালি চোখে বা বাইরে থেকে দেখা যায় না। বিশেষ ধরনের অ্যান্ডোস্কোপ অথবা ন্যাসোফেরিংস এক্স-রের মাধ্যমে বোঝা যায়, শিশুদের অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি বড় হয়েছে নাকি স্বাভাবিক আছে।
উপসর্গ
» শিশু মুখ হাঁ করে ঘুমাবে।
» ঘুমের মধ্যে শব্দ হয় বা নাক ডাকে। হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে ঘুম থেকে উঠেও যেতে পারে।
» ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে ভোগে, সহজে সারতে চায় না।
» লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে নাকে মাংস বাড়ে।
» ঘন ঘন কানে ব্যথা, সংক্রমণ, পর্দা ফেটে যাওয়া, পানি জমা, কম শোনার মতো সমস্যা হয়।
» ঘন ঘন গলার সংক্রমণ হয়, খুসখুসে কাশির পাশাপাশি গলার স্বর বসে যায়।
» দেহে অক্সিজেন স্বল্পতার জন্য ঘুম ঘুম ভাব, পড়ালেখা ও স্কুলে অমনোযোগী হওয়া, বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হওয়া।
চিকিৎসা
শিশুদের এ ধরনের সমস্যা হলে নাক-কান-গলারোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অনেক ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করতে হয়।
ওষুধ হিসেবে অ্যান্টিহিস্টামিন, মন্টিলুকাস্ট, নাকের স্প্রে বা ড্রপ এবং কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। অনেক সময় শিশুর বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর হলেও অ্যাডিনয়েড স্বাভাবিক হয় না।
তবে ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় না হলে অপারেশন করা উচিত, যা নিরাপদ। অনেকে শিশুদের অপারেশন ভেবে আতঙ্কিত হয়ে থাকেন। মনে রাখতে হবে, এটি শিশুদেরই রোগ।
প্রতিরোধে করণীয়
» ফ্রিজের খাবার, আইসক্রিম, অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলুন।
» ঘুমানোর সময় একটু উঁচু বালিশে শিশুকে ঘুমাতে দিন। শীতের পোশাক নিশ্চিত করুন।
» বয়স অনুযায়ী সঠিক ওজন বজায় রাখুন।
» স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, পর্যাপ্ত পানি পান করান।
» সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শিশুকে অভ্যস্ত করুন।
» শীতের রাতে ও ভোরে বা সকালে বাইরে বের হলে কানটুপি ব্যবহার করতে দিন।
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
এফসিপিএস (ইএনটি)
নাক-কান-গলারোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, রেজিস্ট্রার, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল