হঠাৎ বুক জ্বালাপোড়া করা, টক ঢেকুর ওঠা এসব লক্ষণের সাথে আমারা সবাই পরিচিত। বুক জ¦ালাপোড়া যদি নিয়মিত হয় তবে তা রোগ। আর এ রোগকে জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বলে। আমরা যখন খাবার খাই, তখন চর্বণকৃত খাবার খাদ্যনালি দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছায়। খাবার হজমের এক পর্যায়ে পাকস্থলীতে এসিড ও পেপসিন নামক এনজাইম নির্গত হয়, যেগুলো খাবারের সাথে মিশ্রিত হয়। এ মিশ্রন পাকস্থলী থেকে আরো নিচের দিকে নামে। আর যদি কখনো তা নিচে না নেমে উপরের দিকে উঠে আসে বা খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে এবং এ সমস্যা যদি ঘন ঘন হয়, তখন একে ডিইআরডি বলা হয়। কোন ব্যক্তির এ সমস্যা যদি সপ্তাহে দুদিন বা তার বেশির হয়, তখন রোগিকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ সমস্যা রোগিকে নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজের ব্যাঘাত ঘটায়।
১. রোগটি হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী।
২. খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর সংযোগের অংশ যদি কোনো কারণে দূর্বল হয় তখন রোগটি হতে পারে।
৩. কোনো কারণে যদি পেঠের ভেতরের চাপ বেড়ে যায়, যেমন: গর্ভধারণ, অতিরিক্ত স্থুলতা ইত্যাদি।
৪. সঠিক ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্থ না হওয়া।
৫. চর্বি, ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাদ্য গ্রহণ।
৬. ধুমপান, মদ্যপান, তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ।
৭. অতিরিক্ত চা-কফি পান।
৮. খাদ্য গ্রহণের সাথে বা পরপরই অতিরিক্ত পানি পান, শুয়ে যাওয়া।
৯. কিছু ঔষুধের আধিক্যের কারণেও রোগটি হয়।
১০. হায়াটাল হার্ণিয়া নামক মধ্যচ্ছদার একটা সমস্যার কারণেও রোগটি হয়ে থাকে।
লক্ষণ
১) বুক জ¦ালাপোড়া, বুকে ব্যথা।
২) খাবার গিলতে গলা ব্যথা, উপরের পেট ব্যথা।
৩) বমিভাব, খাবার উপরের দিকে উঠে আসা।
৪) মুখে টক টক স্বাদ অনুভব।
৫) দীর্ঘমেয়াদী কাশি, নিউমোনিয়া, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, শ^াসকষ্ট।
৬) রোগটির দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা হিসেবে খাদ্যনালির নিচের অংশ সরু হয়ে যাওয়া এবং খাদ্যনালির ক্যান্সারও হতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
প্রথমত রোগীর লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ঔষধ প্রদান করা হয়। এরপর জটিলতা না কমলে এন্ডোস্কপির মাধ্যমে খাদ্যনালীর রসের পিএইচ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও এন্ডোস্কপি দিয়ে আপার জিআইটি পরীক্ষা করানো হয়। কোনো কোনো রোগীর এ রোগের সাথে পাকস্থলিতে বা ডিওডেনামে আলসার বা ক্ষত থাকতে পারে, যাকে পিইউডি বলা হয়।
চিকিৎসা
রোগীকে প্রথমেই তাদের খাদ্যভ্যাস ও জীবনযাপনের পরিবর্তনের কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও দেয়া যেতে পারে।
প্রতিরোধ
১. একেবারে পেট ভরে খাওয়া যাবে না
২. খাবার তাড়াহুড়া করে খাওয়া যাবে না
৩. ভালমত চিবিয়ে খেতে হবে
৪. খাবারের সাথে পানি পান করা যাবেনা
৫. খাবারের পরই শোয়া যাবে না
৬. রাতে ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে খাদ্যগ্রহণ শেষ করতে হবে
৭. বাইরের ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত, চর্বি ও মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
৮. অতিরিক্ত আট-সাঁট জামাকাপড় পরিধান না করা
৯. ধুমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে
১০. অতিরিক্ত চা, কফি ও চকোলেট পরিহার করা
১১. রাতে শোয়ার সময় বালিশ অন্তত ৪-৮ ইঞ্চি উঁচু করতে হবে
১২. বয়স বাড়ার সাথে রোগটি হওয়ায় আশংকা বাড়ে তাই আগে থেকে সাবধানতা মেনে বলা উচিত।
ডা: মোঃ হুমায়ুন কবীর
কনসালটেন্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩, নবাব কাটারা, নিমতলী, চানখাঁরপুল
ঢাকা-১০০০।